ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করার কোনো বাস্তবতা এখন নেই। গতকাল বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে সিইসির সঙ্গে দেখা করেছি। রোডম্যাপ ধরে কাজ ভালোই এগোচ্ছে জেনেছি। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনীতিতে ‘বেশ উত্তাপ’ ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, রাজনৈতিক দলের বক্তব্য একেবারেই বিপরীতমুখী, এটা কথা আর বাগ্যুদ্ধ। প্রকৃত অর্থে সবাই জাতীয় নির্বাচনে ফোকাস দিচ্ছে। তিনি জানান, ঐকমত্য কমিশন থেকে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কী প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন কবে করবে। সেক্ষেত্রে (গণভোট কবে) সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে ইসি চেয়ে আছে। কিন্তু আমরাও বুঝি, প্রকারান্তরে তারাও (ইসি) স্বীকার করবে- এখনকার বাস্তবতায় দুটি ভোট করার ওই বাস্তবতা নেই। যেহেতু মোটামুটি সব দল এখানে কনভিন্স যে, ন্যাশনাল ইলেকশনের সঙ্গেই জুলাই সনদের বিষয়ে গণভোট। এটাই একটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এনসিপিকে উদ্দেশ্য করে গণঅধিকার সভাপতি জানান, গেজেটে না থাকলে সাধারণত প্রতীক পাওয়া যায় না, ইসির তালিকা থেকে নিতে হয়। গণঅধিকার পরিষদের প্রতীকের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সুতরাং অন্যান্য দলেরও উচিত হবে না, নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ইসিকে বিতর্কিত করা।
যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইসিকে মেরুদণ্ড শক্ত রাখার পরামর্শ দিয়ে গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুর বলেন, ‘ইসিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মেরুদণ্ড সোজা করে নেন’- আমরা বলেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটি উদীয়মান রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা সারা দেশে সংগঠন সম্প্রসারণে কাজ করছি। ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই, তাদের পরিচিত করা ও গণসংযোগ জোরদারের কাজ চলছে। আপাতত কারও সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে, জামায়াতের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। আবার বিএনপি-জামায়াতের বাইরেও বিকল্প রাজনৈতিক জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
উপদেষ্টাদের ভোটে অংশ গ্রহণ নয় : অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা যেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সে ব্যবস্থা নিতে বলেছে গণঅধিকার পরিষদ। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির সহসভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে উপদেষ্টা পরিষদের কেউ যেন ভোটে অংশ নিতে না পারে, সে বিধান করার জন্য আমরা বলেছি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বৈঠকে দলটির সাত সদস্যের প্রতিনিধি অংশ নেন। এ সময় তারা নয়টি দাবি তুলে ধরেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সংশ্লিষ্টদের রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে না রাখা। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা এবং কেন্দ্রের বাইরে একটি জায়ান্ট স্ক্রিনে জনসাধারণের জন্য কেন্দ্রের ভিতরের ভোট কার্যক্রম ও ভোট গণনা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালটবাক্স উপজেলাতে পাঠানোর সময় এবং ভোট কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক প্রার্থীদের এজেন্টদের সঙ্গে রাখা। ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্র দখল ও কালো ভোটের অভিযোগ থাকলে ভোট গ্রহণ বন্ধ করা। কোনো প্রার্থীর সমর্থকরা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনী কাজে বাধা প্রদান, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করলে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিগত তিনটি (২০১৪, ২০১৮, ২০২৪) নির্বাচনে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেছে, এমন কোনো কর্মকর্তাকে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, এমন বিধান যুক্ত করা। তফসিলের পর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো।প