ঢাকা-আগরতলা আর্ন্তজাতিক সড়কের আখাউড়ার আবদুল্লাহপুর এলাকার জাজি নদীর উপর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে চলছে যান। দীর্ঘ দেড় বছরেও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সেতু দিয়ে যান চলাচলের সময় বিকট শব্দের কারণে লেখাপড়ার ব্যাঘাত হচ্ছে বলে পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্টে টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মনিয়ন্দ এবং মোগড়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানির তীব্র স্রোতে গাজীরবাজার আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণে জাজি নদী (খাল নামে পরিচিত) উপর অবস্থিত এই বেইলি সেতুর মধ্যের পিলার (নিচের বিম) সরে কাঁত হয়ে পড়ে। এসময় উপজেলা প্রশাসন ও সওজ কর্তৃপক্ষ সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
পরে সেতুর ক্ষতিগ্রস্থ পিলার ও পাটাতনের মাঝে কাঠ বসায় সওজ কর্তৃপক্ষ। এর কয়েক ফুট দূরে অস্থায়ী স্টিলের পিলার বসনো হয়। সেটাও এখন মূল সেতু থেকে ফাঁক হয়ে গেছে। সেতু সংলগ্ন খালের দক্ষিণ দিকের পাড়ও ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। সেতুর উপরে ভারী যান ট্রাক, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, সিএনজি, যাত্রীবাহী বাস উঠলেই কম্পনের সৃষ্টি হয়। মাঝখানের পাঠাতন দেবে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গাজীরবাজার এলাকার এই বেইলি সেতু দিয়েই আখাউড়া স্থলবন্দরে যেতে হয়। কোন বিকল্প সড়ক নেই। তাই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে এই সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে তুলা, ফার্নিচার, প্লাস্টিক, পাথর, সিমেন্ট ও মাছসহ বিভিন্ন পণ্য ট্রাকে করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় রফতানি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১৫/২০টি ট্রাক এই বেইলি সেতুর দিয়ে আগরতলায় যায়। তাছাড়া আখাউড়া-আগরতলা বন্দর দিয়ে দুই বাংলার প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক যাত্রী আসা যাওয়া করে। যাত্রীবাহী বাসও আসা-যাওয়া করছে। পাথর বহনকারী ট্রাকের ওজন ১৫/২০ টন আর সিমেন্ট বহনকারী ট্রাকের ওজন ২৫/৩০ মেট্রিক টন।
সেতু সংলগ্ন উত্তর পাশে দিকে অবস্থিত আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, ব্রিজের উপর ট্রাক বা বাস উঠলেই বিকট শব্দ হয়। সারাদিন এই উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের সহ্য করতে হয়। তাদের মনোসংযোগ বিঘ্ন ঘটে। শিক্ষকদের উচ্চ স্বরে কথা বলতে হয়।
ট্রাকচালক মনি লাল সাহা ও রফিক মিয়া বলেন, সেতুতে গাড়ি উঠলে কাঁপতে থাকে। আগে মাসে ২০/২৫ বার আসতাম। এখন ভয়ে আসতে ইচ্ছে হয় না।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি রফতানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ৩০ টন ওজনের ট্রাক আসা যাওয়া করে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করে। এই সেতুর বিকল্প কোন সড়ক নেই।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আল মামুন জানান, সেতুতে গাড়ি উঠলেই সেতুটিতে ঝাঁকুনি হয়। এই সেতুর উপর দিয়ে সর্বোচ্চ ১০/১২ টন ওজনের যান চলাচল করতে পারবে। আপাতত অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়েছে সচল রাখার জন্য। বেইলি সেতুর পাশে আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা