ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ছোট ভাই পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন।
সোমবার শহরের স্বর্ণকার পট্টি থেকে মির্জা পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত পৌনে দুই কিলোমিটার রাস্তার পুনঃপাকাকরণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ দায় স্বীকার করেন।
পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, পৌরবাসীর ভোটের মাধ্যমে তিন বছর আগে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু বিগত ৩ বছরে পৌরবাসীর জন্য কোন উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারিনি।
তিনি বলেন, 'পৌরসভার উন্নয়নের জন্য ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে ঢাকায় তার বাসায় দেখা করেছি। উনার কাছ থেকে ডিও লেটার নিয়েছি; কাজের জন্য তদবির করেছি। তিনি নিজেই এ বিষয়ে বহুবার সহযোগিতা করেছে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি বিরোধী দলের মেয়র হিসেবে গত ৩ বছরে কোন উন্নয়নের কাজ করতে পারিনি। আমার দুর্ভাগ্যের সাথে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৫৬ হাজার ভোটার ও বসবাসরত সকল মানুষের ভাগ্য জড়িত ছিল।'
'ঠাকুরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসার পূর্বে আমরা সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহা. সাদেক কুরাইশীর কাছে গিয়েছিলাম এবং তাদেরকে বলেছি পৌরসভার কিছু উন্নয়নের কাজ রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ঠাকুরগাঁওয়ে আসবেন তখন অনেক দাবির সাথে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো তুলে ধরবেন। সে দাবিগুলো বড়মাঠের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট তুলে ধরা হয়েছিল।'
তিনি আরো বলেন, 'আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি পৌরসভার সে দাবিগুলো মেনে নিয়েছেন এবং বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও পৌরসভার দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার স্বর্ণকার পট্টি থেকে মির্জা পাম্প পর্যন্ত পৌনে ২ কিলোমিটার রাস্তা পুনঃপাকাকরণে বরাদ্দ আসে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।'
মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, প্রত্যেকটি মানুষ রিক্সায় ঘুরতে ভয় পায়, কারণ রাস্তাগুলোর করুণ দষা। ড্রেনেজ সিস্টেমগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সৎ ইচ্ছা রয়েছে; আমরা যতবার উনার কাছে গিয়েছি উনি বলেছেন 'করে দিব'। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য কারণে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। যে কাজ আজকে এখানে উদ্বোধন হয়েছে এ কাজ সাংসদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল এবং সেই সাথে ছিল আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। এই প্রয়াসে আজে কিছু টাকা এই প্রকল্পের আওতায় আমরা পেয়েছি; যার মধ্য সবচেয়ে জরুরী কিছু রাস্তাঘাট স্কিম আকারে আমরা হাতে নিয়েছি।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার উন্নয়নের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে মন্তব্য করে ফয়সল আমীন বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার উন্নয়ন শুরু হয়েছে; আমি সেটি দৃশ্যমান দেখতে পাচ্ছি। এই উন্নয়ন হবে এই প্রত্যাশা আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে করব। এখানে জনমত বিষয় নয় এখানে জনগণ সবচেয়ে অগ্রাধিকার যোগ্য; এখানে জনগণের কষ্টের কথা ভেবে পৌরসভার জন্য কিছু কাজ করুন।
ফয়সল আমীন বলেন, আজকে আমি মেয়র আছি; আগামীতে নতুন মেয়র আসবে। কিন্তু রাস্তাঘাট, এলাকার জনগণ থেকে যাবে। এখানে দল বড় কথা নয়, এখানে উন্নয়নটা এলাকার লোকের স্বার্থটাই সবচেয়ে বড় জিনিস।
ঠাকুরগাঁওবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে পৌরমেয়র মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, দীর্ঘ ৩ বছর যে কষ্ট শয্য করতে হয়েছে তার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আশা করছি আমাদের সুযোগ্য নেতা আমাদের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত যে প্রজেক্টগুলো আছে সেগুলো আগামীতে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার জন্য বাস্তবায়ন হবে।
পরে সড়ক পুনঃনির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি রমেশ চন্দ্র সেন পৌরমেয়র মির্জা ফয়সল আমীনের বক্তব্যের উত্তরে বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা মডেল পৌরসভা হবে, সদর উপজেলা মডেল উপজেলা হবে। এ জন্য সব ধরনের উন্নয়ন কাজ করা হবে বলে অঙ্গীকার করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিনুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহা. সাদেক কুরাইশী, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব সভাপতি মনসুর আলী, জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল