শুকনো মৌসুমে পানি কমে যাওয়ার ফলে ভাঙনের কবলে পড়েছে আজমিরীগঞ্জের কালনী ও কুশিয়ারা নদীর তীর। নদী ভাঙনের কারণে বিলিন হয়ে গেছে জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের অন্তত ২শ’ পরিবার। নিঃস্ব হয়ে এসব পরিবারের বাসিন্দাদের অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়েছেন। আবার কেউবা সরে গেছেন নদীর পাড় থেকে অন্যত্র।
হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত ভাটি অঞ্চল আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইছেও ইউনিয়ন। এ ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে গেছে কালনী, কুশিয়ারা-ভেড়ামোহনা নদী। চলতি শুকনো মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙতে শুরু করেছে নদীর তীর। প্রতিনিয়তই তীর ভেঙে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। বিলিন হচ্ছে ভিটেমাটি। ইতিমধ্যে নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়নের সৌলরী, মণিপুর, বদরপুর, জয়নগর ঋষি হাটি, কাদিরপুর, নজরাকান্দা ও সাহা নগরসহ ১০টি গ্রামের প্রায় ২শ’ বাড়িঘর নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
এসব গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। কেউবা আবার বসত গড়েছেন নদীর তীর থেকে দূরে অন্য স্থানে। এদিকে নদীর এক তীর ভাঙলেও অপর তীর পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার কাটিয়াকান্দা, গজারিয়া এলাকায় মাইলের পর মাইল চর পড়ে ভরাট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জের সৌলরী গ্রামের আবুল ফজল জানান, প্রায় এক যুগ ধরে কালনী-কুশিয়ারা ও ভেড়ামোহনা নদীর পশ্চিম পাশের কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার কাটিয়ারকান্দা গজারিয়া এলাকায় পলি পড়ে মাইলের পর মাইল নদী ভরাট হয়ে চড় জেগে উঠছে। চড় পড়ে যাওয়ার ফলে খরস্রোতা নদীর পানির গতি বেড়ে আমাদের পূর্ব পাড়ের দিকে ধাবিত হয়ে ধাক্কা দিচ্ছে। ফলে আমাদের বাড়ির দিকের নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। বর্তমানে শুকনো মৌসুমে নদীর পাড় ভাঙছে। এভাবে নদীর পাড় ভাঙার ফলে আমাদের বাড়ি ঘর ও বসত ভিটে ভেঙে যাচ্ছে। তিনি নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
একই গ্রামের মুহিত মিয়া জানান, নদী ভাঙনে আমার বাড়ির সামনের বিছড়া নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বশতভিটা ভাঙতে শুরু করেছে। আর বসতভিটা ভাঙলে আমরা যাবো কোথায়। মনিপুর গ্রামের হক মিয়া জানান, নদীতে আমার বসতবাড়ি ও ঘর বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের গ্রামের মসজিদ মাদ্রাসা নদীতে তলিয়ে গেছে। তিনি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।
নদী ভাঙন পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অমিতাভ পরাগ তালুকদার, উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসময় তারা নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন। পরিদর্শনকালে নদী ভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, প্রকল্প গ্রহণ করে নদীর ২ হাজার ২শ’ মিটার এলাকা শীঘ্রই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাটি অঞ্চলের প্রাচীন এ গ্রামগুলোকে রক্ষায় অবিলম্বে নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় এলাকাবাসী।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক