টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি ও নানা সামাজিক অবকাঠামো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙনে বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দেয়। এ অঞ্চলের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। এ বছরও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এর ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, গাছপালা ও আবাদি জমি।
সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি ও কাবিলপুর গ্রামে। এছাড়াও ফুলছড়ি, ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাতেও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন কটিয়ারভিটা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙনের গতি ক্রমেই বাড়ছে। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ও গাছপালা সরিয়ে অন্যত্র সরে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসীর।
ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাড়িয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও কয়েকটি মসজিদ, মন্দির, কবরস্থানসহ বিভিন্ন সামাজিক অবকাঠামোও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
কটিয়ারভিটা গ্রামের বাসিন্দা বিন্দু রানী জানান, গত সাত দিনে ভাঙনের কারণে অন্তত ১০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ‘এভাবে চলতে থাকলে আমাদেরও আর বসতবাড়ি থাকবে না,’ বলেন তিনি।
আরেক বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা এলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। পানির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে দুশ্চিন্তা। আমাদের দুঃখে কেউ খোঁজও নেয় না।’
কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপি রানী বলেন, ‘ভাঙনস্থল থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র ৫০ মিটার। প্রতিদিন স্কুল চলাকালীন আমরা আতঙ্কে থাকি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদে ফুলছড়ি স্টেশনে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীতে জেলা শহরের নতুন ব্রিজ স্টেশনে পানি ৪৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও এসব নদনদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি, তবে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর স্টেশনে ১১ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাউনিয়া স্টেশনে ২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। কটিয়ারভিটা থেকে উত্তর উড়িয়া পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রক্ষায় বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ