বরিশালে এখনও খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। অপরদিকে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৪০ টাকায়। সরকার পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি আলু সর্বোচ্চ ২৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিলেও এর কোন প্রভাব পড়েনি বরিশালে। সরকার নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত মূল্যে আলু বিক্রির বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের উপর এবং আড়তদাররা দায় চাপাচ্ছেন মোকামগুলোর উপর।
শনিবার নগরীর বিভিন্ন অলিগলি সড়কের মুদী দোকানীদের ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে। নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের খান সড়কের মুদী দোকানী কাজী জহুরের দোকানে ৫০ টাকা কেজি দরে প্রকাশ্যে আলু বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ৩০ টাকা কেজি দরের বেশী দামে আলু বিক্রির বিষয়ে কাজী জহুর বলেন, ৪৪ টাকা কেজি দরে আড়ত থেকে আলু কিনে আড়তদারী ও লেবার খরচ প্রতি কেজিতে আরও ৫০ পয়সা। ভ্যান ভাড়া দিয়ে দোকান পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে আরও ১ টাকা খরচ পড়ে। এরপর প্রতি বস্তায় অনেক আলু পঁচা বের হয়। এ কারণে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলে খুচরা দোকানে আলু বিক্রি করে কোন লাভ হয় না।
বরিশালে আলুর প্রধান পাইকরী বাজার নগরীর পিয়াজপট্টিতে ট্রাক বোঝাই করে আলু আসে মুন্সিগঞ্জ এবং রাজশাহী থেকে।
মুন্সিগঞ্জ থেকে আলু নিয়ে আসা বেপারী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মোকাম (মুন্সিগঞ্জ) থেকে কিনে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজি আলুতে ৪২ টাকা খরচ পড়ে। অথচ আড়তে বিক্রি করেছেন ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে। আড়তদাররা পাইকরী বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩৫ টাকায়।
আড়তদার তাজ বানিজ্যালয়ের সুলতান তালুকদার জানান, ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বেপারীদের কাছ থেকে আলু কিনে ৬ থেকে ৭ টাকা লোকসান দিয়ে ৩৫ টাকা কেজি দরে পাইকারী বিক্রি করছেন। এরপরও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পাইকরী প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে বলছেন ২৩ থেকে ২৫ টাকায়। এভাবে লোকসান হলে বেপারীরা আলু নিয়ে শিগগিরই আর বরিশাল আসবেনা।
আড়তদাররা জানান, আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার পর পাইকরী বাজারে ক্রেতাও কমে গেছে। এ কারণে আলুর আড়তের শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা সাময়িক অন্য পেশায় চলে গেছে।
এদিকে আলুর বাজারে নিয়ন্ত্রণে শনিবার দুপুরে নগরীর পাইকরী আলুর বাজার পিয়াজপট্টিতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করায় দুই আড়তদারকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দুটি আড়তে জরিমানার পর পিয়াজপট্টির ব্যবসায়ী নেতারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন, সরকার মূল্য নির্ধারণ করার আগে তারা বেশী দামে মোকাম থেকে আলু এনেছেন। লোকসান দিয়ে তারা ওই আলু বিক্রি করছেন। মজুত থাকা আলু বিক্রির পর তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে আলু কিনবেন না এবং নিজেদের আড়তেও বিক্রি করবেন না। পরে অভিযান সংক্ষিপ্ত করে চলে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা আছে পাইকরী বাজারে প্রতি কেজি আলু সর্বোচ্চ ২৫ টাকায় বিক্রির। অথচ বরিশালের আড়তগুলোতে এখনও ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে আড়তদারদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। সরকারের নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল