৩০ নভেম্বর, ২০২০ ১৬:১২

দৃশ্যমান হল পাকিস্তানি হানাদারদের বাঙালি হত্যার নিদর্শন ইন্দারা

নজরুল মৃধা, রংপুর

দৃশ্যমান হল পাকিস্তানি হানাদারদের বাঙালি হত্যার নিদর্শন ইন্দারা

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর দৃশ্যমান হল পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে বাঙ্গালী হত্যার নিদর্শন ইন্দারা (কুয়া)। এই কুয়ার পাশেই ছিল একটি বড়াই গাছ। ওই গাছে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হত স্বাধীনতাকামি বাঙালিদের। তারপর হত্যা করে ফেলে দেয়া হত কুয়ার ভিতরে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারেরা রংপুর টাউন হলকে বানিয়েছিল টর্চার ক্যাম্প। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরে হলেও সম্প্রতি ওই স্থানটিকে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নত করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতি সৌধ। 

সোমবার নির্মাণ কাজ করার জন্য মাটি খুড়তেই লোক চক্ষুর সম্মুখে বেরিয়ে আসে নির্যাতনের চিহ্ন ইন্দারাটি। সেখান থেকে মানুষের দুটি দাতও পাওয়া গেছে। কুয়াটি পুরোপুরি খোড়া হলেও পাকিস্তানিদের হাতে হত্যার শিকার মানুষের হাড়ও পাওয়া যেতে পারে। 

প্রত্যক্ষদর্শি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের পুরো ৯ মাস মুক্তিকামী নিরপরাধ বাঙালীদের ধরে এনে টাউন হলে চালানো হত নির্মম নির্যাতন। বাঙালী রমনীদের ধরে এনে আটকে রেখে দিনের পর দিন তাদের ধর্ষণ করা হত। পরে একসময় তাদের হত্যা করা হত। অসহায় নারী-পুরুষের আত্মচিৎকারে ভারি হয়ে উঠতো টাউন হল চত্বর। টাউন হল সংলগ্ন উত্তর পাশে ছিল একটি বড় পাকা ইন্দারা। ঠিক ইন্দারার পাশেই ছিল বিশাল এক বড়াই গাছ। প্রতিদিন সেই গাছের ডালে ঝুলিয়ে নিরপরাধ মানুষগুলোকে উলঙ্গ অবস্থায় নির্যাতন করা হত। নির্মম নির্যাতনের পর একসময় তাদের হত্যা করে বড়াই গাছের নিচে ইন্দারায় অথবা পাশের তৎকালীন উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্র (বর্তমানে চিড়িয়াখানা) আমবাগানে মাটি চাঁপা দিয়ে রেখে দিত। স্বাধীনতার পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর অনেকেই আম বাগানে অসংখ্য গলিত এবং অর্ধগলিত লাশ দেখেছে। ওই স্থানটিকে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি এই স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করছে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, যে স্থানটিতে স্মৃতিসৌধ হচ্ছে ওই স্থানে পাকিস্তানি হানাদাররা
বাঙ্গালীদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করতো। হত্যার পর ইন্দারা অথবা পাশের তৎকালিন উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্র বর্তমান চিড়িয়াখানার আম বাগানে ফেলে দিত। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পরদিন মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ১৪৭টি মানুষের মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়েছিল। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর