জনবল সংকটে ধুঁকছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন এখন নিজেই রোগী! এখানে ভর্তি হওয়া রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিদিন চিকিৎসকরা রোগীদের নামেমাত্র পরিদর্শন করেই চলে যাচ্ছেন। তারা বেশি সময় দিচ্ছেন শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। এ অবস্থায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অসহায় রোগীরা। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে সুরম্য কমপ্লেক্সের বাইরে থেকে দেখলে ভেতরের অবস্থান বোঝার কোনো উপায় নেই। ২৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে নেই ১১জন চিকিৎসক ও ১৫ সেবিকার মধ্যে নেই ৮ জন। ফলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বাহারুল আলম দুর্গন্ধযুক্ত গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহারের অনুপোযোগীসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ রোগীই অসচেতন। ঠিকমতো টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না। এ কারণে বেগ পেতে হয়। এ ছাড়া পুরো হাসপাতালে তিনজন সুইপার কাজ করেন।
এদিকে এক যুগের বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে আছে এক্সরে মেশিন ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করার সরঞ্জামাদি। বিকল হয়ে আছে জেনারেটর। একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও কোনো কাজে আসছে না রোগীদের। হাসপাতালে বাথরুম-টয়লেট সমস্যা ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট রয়েছে। এ জন্য রোগীদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় কমপ্লেক্সের বাইরে গিয়ে।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এটি ৩১ শয্যা থেকে ২০০৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর দিনদিন রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪০০ থেকে ৫০০, জরুরি বিভাগে ৪০-৫০ জন ও প্রতিমাসে গড়ে ২০০-৩০০ রোগী বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়। এ ছাড়া গত ৬ মাস ধরে গড়ে প্রতি মাসে ২৩টি সিজার অপারেশন করা হয়। এ কমপ্লেক্সের অধিকাংশ পদই শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালে কেমন সেবা পাচ্ছেন রোগীরা- এ নিয়ে কথা হয় উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের মো. শাহ আলমের সাথে। তিনি জানান, নিজে ও পরিবার অসুস্থ হলে বাড়ির পাশের প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া হয়। এ হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা। হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদের সময় না দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। এ ছাড়া নার্সদের দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই।
এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যখাতে যতগুলো কর্মসূচি আছে তার সবগুলোই আমাদের এখানে রয়েছে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ভালো অবস্থানে আছে। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, শূন্যপদ পূরণ ও সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ