ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রামে বছরের পর ধরে বসবাস করছে ২০০ কালোমুখো হনুমান। একেবারেই ভারত ঘেষা ভবনগর গ্রামের বিভিন্ন বাগানে এদের আবাস গড়ে উঠেছে। শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর ও মাঠপাড়াতেও এসব কালোমুখো হনুমান চোখে পড়ে।
কিন্তু এদের অবস্থা এখন কাহিল। রোগাক্রান্ত। ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না। প্রায় সময়ই অভুক্ত থাকে। এদের জন্য সরকারি খাবারের বরাদ্দ নেই। সারাদিন দলবেঁধে কৃষকের ক্ষেত নষ্ট করে সন্ধ্যায় ফিরে আসে আবাসস্থলে।
স্থানীয় শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেম্বার হারুন অর রশিদের ভাষ্যমতে, বৃটিশ আমল থেকে কালোমুখো হনুমানগুলো ভবনগর গ্রামে বসবাস করছে। সম্ভবত এই দলটি প্রথমে ভারত থেকে এসে বংশ বিস্তার করেছিল। এখন দুই শতাধিক হনুমান বসবাস করছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ হক জানান, কালোমুখো হনুমান ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না। তাই খাবারের সন্ধানে কৃষকের ক্ষেত ও মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা করে।
দীর্ঘদিন জীববৈচিত্র নিয়ে কাজ করা মহেশপুরের ভবনগর গ্রামের নাজমুল হোসেন জানান, বছরের পর বছর হনুমানগুলো সরকারিভাবে কোনো খাবার পায় না। মানুষ যা দেয়, তাই খায়। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা দলবেঁধে ফসলের ক্ষেতের ক্ষতি করে। ফলে কৃষকরা প্রতিহত করতে গিয়ে মারধর করেন। ক্ষেতে বিষ দেন। নানাভাবে এরা নির্যাতনের শিকার হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর চৈত্র মাসে ভারত থেকে দলবেঁধে কালোমুখো হনুমান এসে আমাদের দুর্বল হুনুমানদের আক্রমণ করে। তখন গ্রামবাসী সেই হামলা প্রতিহত করে, ভারতীয় হুনুমান তাড়িয়ে দেন। কারণ, আমাদের হুনুমানগুলো অভুক্ত থেকে থেকে ভারতীয় সবল হুনুমান থেকে দুর্বল হয়ে আছে। ভবনগরের হনুমানদের চলাফেরা ও বসবাস বৈচিত্রময়। এরা একেক দিন একেক স্থানে বসবাস করে। কোনো স্থানে স্থির নয় বলেও পশুপ্রেমী নাজমুল জানান।
এলাকাবাসী জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী ভবনগর গ্রামে এসেছিলেন। মহেশপুরের সন্তান হিসেবে তিনি এসব হনুমানের খাবারের সুব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ঝিনাইদহ জেলা বন কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন মুকুল জানান, মহেশপুরের ভবনগরের কালোমুখো হনুমানগুলো সরকারিভাবে কোনো খাবার পায় না। কোনো বরাদ্দ নেই। তবে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী সরেজমিন দেখতে এসেছিলেন। তিনি এদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।
গিয়াস উদ্দীন মুকুল আরও জানান, যশোরের কেশবপুরের হনুমানদের বাজেটের সঙ্গে ভবনগরের হনুমানুদের আপাতত একটি খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। টেন্ডার হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে ভবনগরের এসব কালোমুখো হনুমানের জন্য প্রতিদিন কলা, রুটি ও বাদাম বরাদ্দ থাকবে। এ জন্য ঝিনাইদহ বন বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েকটি স্পট তৈরি করা হবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে খাবার দেওয়া হবে। ফলে এলাকার কৃষকদের আর ফসল নষ্ট করবে না বলে তিনি আশা করেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ