আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চাহিদার চেয়েও বেশি পশু উৎপাদন করা হয়েছে। জেলায় এ বছর বিভিন্ন কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬৩ হাজার হলেও পশু রয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭৭টি। জেলার খামারগুলোর পাশাপাশি পারিবারিকভাবেও পশুর উৎপাদন করা হয়েছে। তবে উৎপাদন নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও তা বিক্রি করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে কোরবানির হাট বসা অনিশ্চিত হওয়ায় খামারিরা এখন চরম উৎকণ্ঠায় দিন পাড় করছে। খামারিরা জানান, লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পশু উৎপাদন করা হয়েছে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারণে লাভ তো দূরের কথা এখন গরু বিক্রি নিয়েই তাদের ভাবতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় তালিকাভুক্ত ১২ হাজার ৩৭০টি খামার ছাড়াও অনেকেই পারিবারিকভাবেও কোরবানির পশু পালন করছেন। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চলছে পশু মোটা তাজা করণের কাজ। খৈল, ভূষি, ঘাস, খড়, বন ও লালিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে পশুদের হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে।
খামারিরা জানান, গতবারও অতিমারি করোনার কারণে তাদের ব্যবসা ভাল যায়নি। ক্ষতি পুষে নিতে এবারও তারা খামারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোরবানির পশু রেখেছেন। তবে লকডাউন দেওয়ায় তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। এদিকে, সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে পশুর ন্যায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হবে বলেও জানিয়েছেন। সারা বছর লাভের আশায় খামারে কাজ করলেও সঠিক সময়ে কোরবানির পশু বিক্রি করতে না পারলে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছে খামারীরা।
খামার মালিক মো. নাসির বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমার খামারে গরুর পরিচর্যা করা হচ্ছে। মোটাতাজা করণে কোনো প্রকার ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে এবার বাজারজাত নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি। লকডাউনে গরুর হাট না বসলে আর্থিক সংকটে পড়ে যাব। আমাদের খামারে তিনশ’র মতো বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। সর্বনিম্ন দেড়লাখ থেকে ছয় লাখ টাকারও গরু রয়েছে। তবে এবার দুশ্চিন্তায় আছি সামনে লকডাউন, তাই গরুর হাট নাও বসতে পারে। এসব গরু যথাসময়ে বিক্রি না করতে না পারলে লোকসান গুণতে হবে।
সাগর নামে শ্রমিক বলেন, ভাল দামের আশায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে গরুর পরিচর্যা আমাদের একটু বেশি করতে হচ্ছে। হাট না বসলে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। যথাসময়ে বিক্রি না করতে না পারলে মালিকের মারাত্মক লোকসান হবে।
বেশ কয়েকজন খামার মালিক বলেন, অনলাইনে গরু বেচাকেনার পাশাপাশি খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারলেও ভালো হতো। সহজে আমাদের ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নিতে পারতাম। কোরবানির পশুর ন্যায্য মূল্য পাব কি না শঙ্কায় আছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এ বি এম সাইফুজ্জামান বলেন, পশু বিক্রি নিয়ে খামারিদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য প্রতিটি উপজেলায় ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। এতে খামারিদের যাবতীয় পশুর তথ্য আপলোড করা হচ্ছে। অনলাইনে পছন্দের পর ক্রেতারা ইচ্ছামতো খামারে এসে দেখেশুনে তার কোরবানির পছন্দের পশুটি ক্রয় করতে পারছেন। তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে শেষে মুহূর্তে হাটের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই