বগুড়ার আদমদীঘিতে বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দেওয়া সেই লাজিনা বেওয়াকে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে আদমদিঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইউএনও শ্রাবণী রায় তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সিরাজুল ইসলাম খাঁন রাজু, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন, আওয়ামীলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ও বিধবার ছেলে মামুনুর রশিদ প্রমূখ।
স্বজনারা জানান, লাজিনা বেওয়া আদমদিঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাতইর গ্রামের মৃত হাদিস আলীর স্ত্রী। মাত্র ১০ শতক সম্পত্তি রেখে স্বামী ১৯৮২ সালে মারা যান। মাত্র ২২ বছর বয়সে বিধবা লাজিনা বেওয়া ছোট দুটি মেয়ে ও ছয় মাস বয়সের ছেলে মামুনকে আঁকড়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সংসারে একটু সচ্ছলতা ফেরাতে ১৯৯৮ সালে বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন।
তবে তখন তিনি স্থির করেন, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরলে তিনি এ কার্ড ফেরত দেবেন। অনেক কষ্টের মাঝে দুটি মেয়েকে বিয়ে দেন। একমাত্র ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন লেখাপড়া শেষ করেন। সংসারের হাল ধরতে সরকারিভাবে (জিটুজি পদ্ধতিতে) ২০১৪ সালে মাত্র ৩৩ হাজার টাকা খরচে মালয়েশিয়া যান। তিনি দুই বছর পর দেশে ফিরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি লাভ করেন। ছেলে আয় করায় লাজিনা বেওয়ার সংসারে অভাব দূর হয়ে যায়, ফিরে আসে স্বচ্ছলতা।
তাই তিনি সিদ্ধান্ত অনুসারে তার বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দেওয়ার জন্য গত ৭ জুন সমাজ সেবা দপ্তরে আবেদন করেন। কষ্টের দিনে এমন সহযোগিতা পাওয়ায় এবং উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার দুপুরে সম্মাননা পাওয়ায় তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
লাজিনার কার্ড ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ছেলে মামুনুর রশিদ জানান, মা অনেক কষ্ট করলেও সততার সঙ্গে জীবনযাপন করেছেন। তিনি কারও অনুগ্রহ নিতে চাননি। বিধবা ভাতা কার্ডটি সরকারি সহায়তা এবং সেটি তার প্রাপ্য ছিল। তাই তিনি নিয়েছিলেন। আমি যখন সরকারি চাকরিতে যোগ দিলাম, তখন থেকেই তিনি ভাতার কার্ডটি আর রাখতে চাননি।
লাজিনা বেওয়া বলেন, যখন দরকার ছিল তখন সরকারের সাহায্য নিয়েছি। এখন তো আর দরকার নাই। তাই বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দিয়েছি। ফেরত দেওয়া কার্ডের বদলে আরেকজন অভাবী বিধবা সাহায্য পায় তাহলেই খুশি। সেই সাথে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সম্মাননা দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন জানান, লাজিনা বেওয়া সারাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেজন্য আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। এ উপজেলায় কার্ড ফেরত দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বিধবা ওই নারীর সিদ্ধান্ত খুব ভালো লেগেছে। ওই নারীর কাছে শিক্ষা নেওয়া উচিত, প্রয়োজন ছাড়া কোনো কিছু নেওয়া ঠিক নয়।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন