নয় দিন পার হলেও বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে কুঁড়িয়ে পাওয়া শিশুর অভিভাবককে এখনো পাওয়া যায়নি। ফলে মাত্র ৫ মাস বয়সের ওই শিশু পুত্রটিকে রাখা হয়েছে ট্রেনে কাটা লাশ বহনকারি এরশাদ আলী ও তার স্ত্রী সখিনা বিবির দায়িত্বে। তারা বলছেন, প্রকৃত বাবা-মায়ের খোঁজ হলে তাদের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে। এদিকে, খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় ওই শিশুটিকে নজরদারিতে রাখতে সান্তাহার পৌর মেয়রকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
জানা যায়, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটগ্রামের লছির প্রামানিকে ছেলে এরশাদ আলী দীর্ঘদিন ধরে সান্তাহার মালগুদাম এলাকায় বসবাস করেন। সেখানে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী সখিনাকে নিয়ে রেলওয়ের জায়গায় একটি কুঁড়ে ঘরে থাকেন। ভাঙাড়ি ব্যবসার পাশাপাশি এ অঞ্চলে ট্রেনে কাটা যতো লাশ তিনিই বহন করেন। এ কারনেই তার অধিকাংশ সময় কাটে সান্তাহার জংশন স্টেশনে।
এরশাদ জানান, গত বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী শিশুটিকে কোলে নিয়ে ঘুরছিল। কিছুক্ষণ পর প্লাটফরমের উত্তরপাশে সেই শিশুটিকে বৃষ্টি নামের কিশোরীর কোলে দেখতে পাই। তখন ওই কিশোরীকে জিজ্ঞেস করি ‘শিশুটি তো অন্য এক নারীর কোলে দেখলাম, এখন তোমার কোলে কেন? উত্তরে সে বলল- আমার কোলে দিয়ে ওই মহিলা ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে গেছেন। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুজির পর ওই নারীকে বের করে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি শিশুটিকে অস্বীকার করেন। সাফ জানিয়ে দেন শিশুটি তার নয়। শিশুটিকে নিয়ে তিনি মহা বেকায়দায় পড়েন। এরপর তিনি সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের সরাণাপন্ন হন।
সান্তাহার রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিউল আজম জানায়, শিশুটিকে পাওয়ার পর থেকে এরশাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি করা হচ্ছে।
এদিকে শিশুটি চুরি করা এমন সন্দেহে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে এবং ইউএনও’কে বিষয়টি জানান। এরপর এরশাদ আলী ও তার স্ত্রী সখিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউএনও অফিসে ডাকা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এরশাদ দম্পতি শিশুটিকে নিয়ে সেখানে হাজির হন।
এরশাদের দাবি, ২২ বছর সংসার জীবনে কোনো সন্তান নেই তাদের। প্রকৃত বাবা-মা খুঁজে বের না হলে তাঁরা এই শিশুটিকে লালন-পালন করতে চায়। এজন্য ইতিমধ্যে শিশুটির নাম রেখেছেন শিহাব হোসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় জানান, মাত্র ৫ মাস বয়সের শিশুটিকে এভাবে ফেলে রেখে যাওয়াটা সন্দেহজনক। শিশুটির পরিবারের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত ওই দম্পতির হেফাজতে থাকবে। আর এজন্য সান্তাহার পৌর মেয়রকে নজরদারি ও দেখভালের জন্য বলা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ