ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বদিকে প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ মনোহরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামটি। লক্ষীপুর এবং দামুকদিয়া দুটি গ্রামের ঠিক মাঝখানে বাজারের অবস্থান হওয়ায় এলাকাবাসী স্থানীয় বাজারের নাম দিয়েছে সীমান্তবাজার। তবে এটি মোটেও কোন দেশের সীমান্ত নয়। ওই বাজারের পূর্বপ্রান্তে দিগন্তজোড়া মাঠের পাশে এলাকাবাসী প্রায় দুই দশক আগে প্রতিষ্ঠা করে একটি প্রাইমারি স্কুল। আর বাজারের নামানুসারে নাম হয় লক্ষীপুর সীমান্তবাজার প্রাইমারি স্কুল।
স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমেলায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও পেয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষায়ও ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা স্কুলটি পরিদর্শন করে অবিলম্বে সেটি জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করেছেন। কিন্তু তার ফল পায়নি এলাকাবাসী, হয়নি জাতীয়করণ। ফলে শঙ্কায় অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
বেশ কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী জানায়, একদিন পরপর তাদের বিস্কুট, কেক বা অনুরুপ নাস্তা দেয়ার কারণে তাদের ক্ষুধা কিছুটা মিটে যায় স্কুলেই। ফলে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে না, ক্লাসে কেউ অনুপস্থিত থাকে না।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মিনা খাতুন ও স্বর্ণালি খাতুন জানান, গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রাইমারি স্কুলটির দাবি ছিল তাদের একবারেই প্রাণের। এটি প্রতিষ্ঠার আগে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে তিন কিলোমিটার দূরে নাগিরাট, বিষ্ণুদিয়া বা মনোহরপুর ছুটতে হতো। আবার যেসব পরিবারের অভিভাবক শিশুদের নিয়ে দূরবর্তী শিক্ষালয়ে যেতে পারতেন না, তাদের শিশুদের পড়াশুনা হতো না। লক্ষীপুর সীমান্তবাজার প্রাইমারি স্কুলটি এখন তাদের এবং সন্তানদের জন্য রীতিমত আশির্বাদ। ওই দুই অভিভাবক জানালেন, স্কুলের সামনের মাঠে বর্ষামৌসুমে পানি জমে থাকে। শিশুরা খেলাধুলা দূরে থাক, হাটাচলাও করতে পারে না। কোনোভাবে পানিতে ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ে অভিভাবকদের। এলাকাবাসীর দেয়া টিনের চালার ঘরটিতে ছেলেমেয়েদের স্থান সংকুলান হয় না।
লক্ষীপুর সীমান্তবাজার প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণয় কুমার মজুমদার জানালেন, টিনের চালার স্কুল ঘরে তিন কক্ষে দু’ শিফটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলে, আরেক ছোট্ট কক্ষে তিনিসহ চার শিক্ষক গাদাগাদি করে বসেন। অফিসঘর বলতেও ওই কক্ষটিই। কয়েকজন প্রবাসীর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন খুলনা বিভাগের এ প্রাইমারি স্কুলে পোশাক, আসবাব ও অন্যান্য সহযেগিতা এবং সপ্তাহে তিনদিন হালকা নাস্তার আয়োজন করায় শিশুরা মনের আনন্দে লেখাপড়া করে, ছোটাছুটি করে সময় কাটায়।
লক্ষীপুর সীমান্তবাজার প্রাইমারি স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বেশ ক্ষোভের সাথে জানান, শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের নিয়মিত ও মানসম্পন্ন শিক্ষাদান, বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা, জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও খেলাধুলায় কৃতিত্ব দেখানো সত্বেও দীর্ঘ দুই দশকেও তার স্কুলটি জাতীয়করণ না হওয়ায় তারা সবাই ক্ষুব্ধ। ওই প্রতিষ্ঠানের পরে প্রতিষ্ঠিত বেশ কিছু স্কুল জাতীয়করণের কথা জানিয়ে মজিবর রহমান জানান, এটি তাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাইল হোসেন জানান, লক্ষীপুর সীমান্তবাজার প্রাইমারি স্কুলসহ উপজেলার ৭টি বেসরকারি স্কুলকে জাতীয়করণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানিয়েছেন। তাদের জেলা অফিসও এবিষয়ে অবগত। জাতীয়করণের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমভাগেই এটি জাতীয়করণ হবে বলে তিনি মনে করেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল