কিশোরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম খান পাঠান বীর প্রতীক (৭৩) আর নেই।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত নানা রোগে ভুগছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম খান পাঠান কিশোরগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ছিলেন। তার মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।নূরুল ইসলাম খান পাঠান ১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। ২৫ মার্চের পর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি দল কিশোরগঞ্জে অবস্থান নেয়। ৩ এপ্রিল দলটি তেলিয়াপাড়ায় যায়। তখন মা-বাবাকে না জানিয়ে তিনি ওই দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তেলিয়াপাড়ায় যান। পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীন তেলিয়াপাড়াসহ আরও কয়েকটি স্থানে সাহসের সঙ্গে গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের প্লাটুন কমান্ডারও ছিলেন তিনি।
নভেম্বরের মাঝামাঝি নূরুল ইসলাম খান পাঠানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার চানপুর গ্রামে। সেখানে তারা মাটির বাংকার তৈরি করে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল তাদের ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। তাদের সাঁড়াশি আক্রমণে সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা পশ্চাদপসরণ করেন। কিন্তু নূরুল ইসলাম খান পাঠান ও তার কয়েকজন সহযোদ্ধা জীবনের মায়া ত্যাগ করে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা তাদের তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। তখন তিনি ও কয়েকজন সহযোদ্ধা একের পর এক গ্রেনেড চার্জ করে পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করেন। তাদের গ্রেনেডে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। এ সময় পশ্চাদপসরণ করা মুক্তিযোদ্ধারা আবার যুদ্ধস্থলে ফিরে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এরপর তারা রক্ষণাত্মক যুদ্ধ থেকে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করেন। বৃষ্টির মতো গুলি করতে করতে নূরুল ইসলাম খান পাঠান কয়েকজন সহযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি অবস্থানের ভেতরে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি একাই আরও এগিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি একটি অবস্থান লক্ষ্য করে পর পর দুটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। তার এই অদম্য সাহস দেখে অন্য সহযোদ্ধাদের মনোবল অনেক বেড়ে যায়। তারা চারদিক থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ঘিরে ফেলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী কয়েকজন রাজাকারকে তারা আটক করেন। বাকিরা পালিয়ে যায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত