টানা তিন দিনের বৃষ্টির কারণে বগুড়ায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। পাইকারি বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকলেও খুচরা বাজারে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি। হঠাৎ সবজির দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে সরবরাহ বাড়লে সবজির দাম কমে আসবে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।
তারা আরও জানান, বৃষ্টির কারণে তিন দিন ধরে আড়তগুলোতে বিভিন্ন সবজি ও দেশীয় পিয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে, সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বগুড়ার বাজারে ক্রমাগতভাবে দাম বেড়েই চলছে সবজির। দুই একটি সবজির দাম কিছুটা কমলেও বাকিগুলোর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে অনেক সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা। বিশেষ করে বেকায়দায় পড়েছেন সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা।
সোমবার সকালে বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনি বাজার, খান্দার বাজার ও গোদারপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে যে সবজির দাম ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছিল, তা হঠাৎ করে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পিয়াজ এবং কাঁচা মরিচের চড়া দাম অব্যাহত রয়েছে। বাজারে কোনো সবজির কমতি নেই। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, দেশি পিয়াজ, ভারতীয় পিয়াজ, বেগুন, মুলা, লাল শাক, পালং শাক, পোটল, ঢেঁড়স, বরবটি, ঝিঙ্গা, পেঁপে, আলু, করলা, কচু, শসাসহ অন্যান্য সবজি প্রচুর রয়েছে।
শীতের প্রধান সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বগুড়ার বিভিন্ন মাঠ থেকে কৃষকরা বাজারে তুলছেন। এসব ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা আর বাঁধাকপি ৬০ টাকা কেজি দরে। এদিকে সরকারি নির্ধারিত ৩৬ টাকা মূল্যে আলু বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। দেশি আলু (পাকড়ি) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা প্রতি কেজি। কোনো কোনো বাজারে আলু ৬০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে মুলা, গাঁজর, বেগুন, কচু, কাঁচা মরিচ, পিয়াজ, করলা, ঝিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স। ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মুলা দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ থেকে থেকে ৪৫ টাকা। বেগুনের দাম এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
করলার দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। মুখি কচু ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও দাম বেড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বরবটির দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা প্রতি কেজি। ঢেঁড়স ৪০ টাকা থেকে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, গাঁজর ১৪০ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, পোটল ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়। সরকারি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না পিয়াজ। প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আর ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়াও আদা-রসুনের দামও দ্বিগুণ রয়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে প্রতিটি সবজরি দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
সবজির এমন দামে ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। কলোনি বাজারে সবজি কিনতে আসা শ্রী সুচন্দন সরকার জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে এসে দেখি সবকিছুর দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সবজির দাম আর কমবে কিনা এটা জানা নেই। আমরা গরিব মানুষ। দাম বেশি হওয়ায় অল্প পরিমাণে সকল সবজি কিনেছি। এতেই আমার সপ্তাহের বাজেটের টাকা শেষ। মাছ-মাংসের হাটের দিকে তো যাওয়া আমাদের মতো গরিব মানুষের এখন দুঃস্বপ্ন।
কলোনি বাজারের সবজি ব্যবাসীয় দুলাল মিয়া জানান, টানা তিনদিনের বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়েছে। সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে ফসলি জমিতে পানি জমে যাওয়ায় সবজির ফলন কম হয়েছে। যে কারণে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও আড়তে এখন সবজির দাম আগের তুলনায় বেশি। তাই কেনার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই বিক্রি করছি।
বগুড়া রাজাবাজারের আড়তদার রমজান আলী জানান, বৈশ্বিক বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে আমাদের দেশে আমদানি নির্ভর পণ্য যেমন, আদা, রসুন ও পিয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও বৃষ্টির কারণে চাষিদের ফসল মরে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে। বিধায় সব ধরনের সবজিতে কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বগুড়ার পাইকারি মোকাম মহাস্থান হাটে সব ধরনের সবজির সরবরাহ রয়েছ প্রচুর। বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। তার পরেও বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম কমছে না। নিম্ন আয়ের মানুষরা এসব সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা বলছেন হাট-বাজারে সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে বগুড়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব সবজির দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করছেন।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা মালিপাড়া গ্রামের সবজি চাষি আশরাফ আলী আকন্দ জানান, সবজি চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে আবাদ করে কোনো রকম দিন পার করতে হয়। কিছু অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কৃষকের নিকট থেকে কম দামে সবজি কিনে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়ে বাজারে বিক্রি করেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই