একসময় রাজা-বাদশাহদের বাহন ছিল ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি। যুদ্ধক্ষেত্রেও তার ঘোড়া ব্যবহার করতো। যদিও এখন এই বাহন হিসেবে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্তির পথে। পাশাপাশি সেই আদিকাল থেকেই কৃষিকাজে ঘোড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে ঘোড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজে গরু-মহিষও ব্যবহার হতো। কৃষকরা গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ করতো। কিন্তু কালের বির্বতনে ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের হাল আজ বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে কৃষকরা পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে উন্নতমানের যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে জমিতে হালচাষ করছেন। এতে কম খরচে স্বল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা সম্ভব।
যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে যখন গরু দিয়ে হালচাষ বিলুপ্তির পথে তখন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মো. হানিফ (৫০) নামের এক কৃষক।
দীর্ঘকাল ধরে রণক্ষেত্রের পাশাপাশি মালামাল ও মানুষ পরিবহনে ঘোড়া ব্যবহৃত হয়ে আসলেও কালের পরিক্রমায় তা আজ বিলুপ্তির পথে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করা এক বিরল ঘটনা এমনটাই বললেন স্থানীয়রা।
হানিফ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউপির উত্তর পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার বিকালে সরজমিন দেখা যায়, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন কৃষক হানিফ। হালচাষ দেখতে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়ান।
কৃষক হানিফ জানান, বর্তমান বাজারে এক জোড়া হালের গরুর দাম কমপক্ষে এক লাখ টাকা। সেই তুলনায় বর্তমান বাজারে গরুর চেয়ে ঘোড়ার দাম কম। কিছুদিন পূর্বে তিনি মাত্র ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ছোট সাইজের ঘোড়া কিনেছেন। এ ঘোড়া দুটি দিয়ে তিনি প্রতিদিন এক থেকে দেড় বিঘা জমি চাষ করছেন। তিনি নিজের জমি ছাড়াও গত ৩ বছর ধরে অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন।
তিনি আরো জানান, গরুর চেয়ে ঘোড়া হাঁটে-চলেও অনেক বেশি। ফলে গরুর হালের চেয়ে একই সময়ে ঘোড়া দিয়ে তিনগুণ বেশি জমি চাষ করা যায়। ঘোড়া দিয়ে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে হালচাষ করতে পারেন। তিনি জমি চাষ করতে বিঘাপ্রতি ৬০০ টাকা করে নেন। এতে তার প্রতিমাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ঘোড়া দুইটির খাদ্য বাবদ দৈনিক ১০০ টাকা করে খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পরিবারের ৫ সদস্যের খরচ চলে। এ ঘোড়ার হাল দিয়েই তিনি ঘোড়াচ্ছেন তার জীবিকার চাকা। ঘোড়ার হাল দিয়ে অন্যের জমি চাষ করে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই তিনি সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন। হালচাষ বা জমিতে মই দিয়ে যা পেয়ে থাকেন তা দিয়েই সংসার ভালোভাবেই চলে।
কৃষক নুরুল আলম, হেলাল জানান, ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করলে মাটি গভীরভাবে খনন হয়। মই দেয়ার সময় জমির উঁচু-নিচুও ভালোভাবে সমান হয়। এতে জমিতে পানি সমানভাবে ধরে রাখা সহজতর হয়। একদিনে অনেক জমিতে হালচাষ করা যায়। ফলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হয়। তাই এলাকায় হানিফের ঘোড়ার হালের বেশ চাহিদা রয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, কৃষকরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘোড়ার গাড়িও উঠে গেছে। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা দুর্লভ একটি বিষয়। এটা পারসেনট্রিনের মধ্যে পড়ে না। কৃষি বিভাগ আধুনিক মানের যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ