আসন্ন কুরবানিতে চাহিদার চেয়েও বেশি গরু প্রস্তুত রয়েছে খামারে। তবে সব ধরনের পশু খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে এ বছর পশু পালনে খরচ বৃদ্ধির ফলে খামারে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কায় আছেন শার্শার খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামের খামারে ১০ হাজারের বেশী গবাদিপশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রাকৃতিক ও সুষম খাদ্য দিয়ে এসব গবাদি পশু মোটাতাজা করে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এ বছর অস্বাভাবিক ভাবে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে গরু ছাগল বিক্রি করা যাবে কিনা সংশয়ে আছেন খামার ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের খামার ব্যবসায়ী আল আমিন ও বড়আঁচড়া গ্রামের খামারি আবু তাহের জানান, এবছর খাবারের দাম গতবারের তুলনায় ৩ গুণ বাড়লেও সে হিসাবে গরুর দাম বাড়েনি। বাড়তি দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে পথে বসতে হবে।
তারা বলেন, আমরা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শে স্বাস্থ্যসম্মত ভিটামিন ও ভ্যাকসিন দিয়ে গরু হৃষ্টপুষ্ট করি। যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। আশা করি কুরবানির বাজার ভালো পাবো।
কাগজপুকুর গ্রামের আরেক খামারি কার্তিক রায় বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ ও ও ধারদেনা করে খামারের গরু পরিচর্যা করে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর গরুর দাম পড়বে অনেক বেশি। ফলে কাঙ্খিত দামে বিক্রি করতে না পারলে বেশ ক্ষতি হবে।
এদিকে খামারিদের মত ক্রেতারাও কুরবানির পশু কেনা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতির এই মুহূর্তে বাড়তি দামে কীভাবে পশু কিনে কুরবানি দেবেন তা নিয়ে তারা চিন্তায় আছেন। গত বছরে যে গরুর দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছিলো এবছর সেই গরু ১ লাখের ওপরে দাম হাঁকানো হচ্ছে। ফলে এই দামে কতজন পশু কিনে কুরবানি দিতে পারবেন তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
ঢাকার গাবতলীর পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি পশুরহাট হিসাবে পরিচিত যশোরের বাগ আঁচড়া সাতমাইলের নাম।
কোরবানির ঈদের বাকি সামান্য ক'দিন। জমে উঠতে শুরু করেছে গরু ছাগল বেচাকেনার এই পশুর হাটটি। ইতোমধ্যে ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট বরিশালের গরু ব্যবসায়ীরা আস্তানা গেড়েছেন বাগআঁচড়া পশুর হাটে। শনি ও মঙ্গলবার সপ্তাহে দু'দিন বসে সাতমাইলের পশুহাট। সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার গরু আসছে বিক্রির জন্য। এবার গরুর বেচাকেনা বেশ ভাল। হাটের দিন কয়েক'শ ট্রাক গরু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
বরাবরের মত এ বছরও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে বিপাকে পড়েছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বাজেটের ক্রেতারা। এই দামে বাজারে গরু মিলছে না। অগত্য তাদের কে বেছে নিতে হচ্ছে বকনা অথবা গাভী জাতীয় পশুকে।
গরুর বাজার সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে ১ লাখ থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরু বেচাকেনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তবে ১ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ ২০-৩০ হাজার টারার গরুর খরিদার কম না।
কুষ্টিয়ার কুমারখালি থেকে ৫টি মাঝারি সাইজের গরু নিয়ে এসেছেন আক্তার আলী ও মমরেজ। ৩ ঘণ্টার মধ্যে বেচাবিক্রি শেষ। বাজারে ভালো দামে গরু বিক্রি করতে পেরে তারা খুশি।
ঢাকার মীরপুরের গরু ব্যবসায়ী আজমত এবং চট্টগ্রামের বিল্লু মিয়া জানান, এ বছর প্রচুর গরুর আমদানি হচ্ছে গরুর হাটে। গরুর দাম অনেক বেশি, ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছে না, তবে বেচাকেনা ভালো।
গরু হাটের ইজারাদার ইলিয়াস কবির বকুল জানান, গরু হাটের ইজারা প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা। এ বছর গরুর আমদানি ভালো, আমদানির তুলনায় বেচাকেনা সন্তোষজনক। অনেকে গরু বিক্রি এবং কেনার ক্ষেত্রে শেষ হাট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল