শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

প্রাসাদ বন্দি রাজপুত্র

শারমিন ইসলাম রত্না

প্রাসাদ বন্দি রাজপুত্র

অপূর্ব এক প্রাসাদ। প্রাসাদের সামনে-পেছনে বাগান। গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। ডালে ডালে রঙবেরঙের প্রজাপতি উড়ছে। পাখিরা গান গাইছে। রাজপুত্র আফরাজ দোলনায় বসে আছে। আর উপভোগ করছে বাগানের মনোরম দৃশ্য। হঠাৎ রাজপুত্রের মন খারাপ হলো। সে ভাবল, যদি প্রজাপতির মতো উড়তে পারতাম। পাখির মতো গাইতে পারতাম। যদি ফুলের মতো সুবাস ছড়াতে পারতাম। কত ভালো হতো। ফুলেরা বলল, হে প্রিয় রাজপুত্র, তুমি অবশ্যই ফুলের মতো সুবাস ছড়াতে পারবে। কিন্তু তার আগে তোমাকে প্রাসাদের বাইরে যেতে হবে। পাখিরা বলল, তুমি আমাদের মতো গাইতে পারবে। তোমাকে মনের সুরে সুর মেলাতে হবে। প্রজাপতিরা বলল, তুমি উড়তে পারবে। ঠিক যেমন আমরা উড়ে বেড়াই।  কিন্তু তার আগে তোমাকে কল্পনার ডানা মেলতে হবে।

রাজপুত্র আফরাজ অনুনয় করে রাজাকে বলল, হে শ্রদ্ধেয় বাবা, আমাকে প্রাসাদের বাইরে যেতে দাও। আমি বন্দি থাকতে চাই না। আমি প্রজাপতির মতো উড়তে চাই। পাখির মতো গাইতে চাই। ফুলের মতো সুবাস ছড়াতে চাই। রাজা বললেন, হে রাজপুত্র আফরাজ, তুমি এই রাজ্যের একমাত্র রাজপুত্র। আমাদের আদরের পুত্র। বাইরে গেলে তোমার বিপদ হবে। সে ভয়ে বাইরে যেতে দিই না। রানি বললেন, আমার ছোট্ট পুত্র, তোমাকে এই রাজ্যের সবচেয়ে নামিদামি শিক্ষক এনে দেব। রাজপ্রাসাদে এসে তোমাকে লেখাপড়া শেখাবে। তুমি জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবে। ফুলের মতো তোমার সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে। রাজপুত্র আফরাজ বলল, তোমরা যতকিছুই বল না কেন, আমাকে প্রাসাদের বাইরে যেতে হবে। আমি বন্দি থেকে কিছু করতে পারব না।

রাজপুত্র আফরাজ মন খারাপ করল। রাজা-রানি মন ভালো করার চেষ্টা করলেন। তবুও আফরাজের মন ভালো হলো না। রাজপুত্র আফরাজকে পাহারায় রাখা হলো। সে যেন প্রাসাদের বাইরে যেতে না পারে। প্রাসাদ বন্দি থেকে রাজপুত্র অস্থির হয়ে উঠল। তার কিছুই ভালো লাগছে না। প্রজাপতিরা বলল, প্রিয় রাজপুত্র, মন শক্ত কর। যদি মন দুর্বল করে ফেল তাহলে উড়ে বেড়াতে পারবে না। ফুলেরা বলল, রাজপুত্র আফরাজ, মন ভালো কর। মন খারাপ থাকলে তুমি কিছুই করতে পারবে না। পাখিরা বলল, মন ভালো কর। না হলে তুমি মনের সুরে সুর মেলাতে পারবে না।

 

রাজপুত্র আফরাজ নতুন উদ্যমে বায়না ধরল। হে শ্রদ্ধেয় বাবা-মা, তোমরা আমাকে প্রাসাদের বাইরে যেতে দাও। আমার কোনো বিপদ হবে না। আমি তোমাদের আশ্বস্ত করলাম। রাজা-রানি রাজপুত্রের কথায় আশ্বস্ত হলেন এবং রাজপুত্রকে প্রাসাদের বাইরে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন। ঘোড়া সাজানো হলো। রাজপুত্রের সঙ্গে  সৈন্যদল দেওয়া হলো, যেন রাজপুত্রের বিপদ না হয়। রাজপুত্র ঘোড়া হাঁকিয়ে ছুটে চলল। রাজপুত্র রাজ্যের সবচেয়ে ভালো পাঠশালায় ভর্তি হলো।

 

পাঠশালায় তার অনেক বন্ধু হলো। অবসরে বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করে। কেউ গলা ছেড়ে গান ধরে, কেউ অভিনয় করে, কেউ নেচে দেখায়। ধীরে ধীরে রাজপুত্র আফরাজ অন্যরকম মানুষ হয়ে উঠল। সে যেন নতুন জীবন পেল। আফরাজ পাঠশালার সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। সেই খবর রাজ্যের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্ররা অভিনন্দন জানাতে এলো। রাজপুত্র আফরাজ মনের সুরে সুর মেলাল। তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলো পৃথিবী মাতানো গানের মূর্ছনা। গান শুনে সবাই মুগ্ধ হলো। রাজা-রানি বললেন, প্রিয় পুত্র আফরাজ, তোমাকে অনেক আগেই প্রাসাদের বাইরে যেতে দেওয়া উচিত ছিল। আমরা ভুল করেছি তোমাকে প্রাসাদ বন্দি রেখে। আফরাজ বলল, প্রিয় বাবা-মা, ভুল থেকেই কখনো কখনো ফুল ফোটে। আমাকে তোমাদের প্রার্থনায় রেখ।

রাজপুত্র আফরাজ বাগানে বসে আছে। পাখিরা বলল, প্রিয় রাজপুত্র, আমরা অনেক খুশি। এখন তুমি মনের ডানায় উড়তে পার। ফুলেরা বলল, প্রিয় রাজপুত্র, তুমি লেখাপড়া শিখে জ্ঞানী হয়েছ। তোমার জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দাও।  আর সবার মাঝে বিলিয়ে দাও জ্ঞানের সুবাস। প্রজাপতিরা বলল, রাজপুত্র, এখন তুমি যেখানে মন চায় আমাদের মতো মনের ডানায় উড়ে বেড়াতে পারবে। রাজপুত্র আফরাজ বলল, কৃতজ্ঞতা আমার প্রকৃত বন্ধু।  তোমাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এক নতুন মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর