পিয়ানা জন্মের পর থেকেই একটি মনোরম পরিবেশে বেড়ে ওঠে। সাভারের শ্যামপুর আবাসনে ওদের বসবাস। পিয়ানার বাবা পেশায় একজন পরিবেশ সাংবাদিক। পত্রিকায় পরিবেশ ও গ্রামবাংলার উন্নয়ন সংবাদ সম্পাদনা করে প্রতি সপ্তাহে একটি পাতা সুন্দর করে সাজিয়ে তোলেন। আর পত্রিকায় কাজের আইডিয়া থেকেই প্রকৃতিঘেরা পরিবেশে একটি বাড়ি করার স্বপ্ন জহিরুল হকের। যেই ভাবনা সেই কাজ। সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে শ্যামপুরে একটি দ্বিতলা বাড়ি করেন। বাড়ি করার আগে সে পরিবার নিয়ে পুরান ঢাকার লালবাগে ভাড়া থাকতেন। বাবা-মা’র সঙ্গে পিয়ানা শ্যামপুরের বাড়িতে ওঠার পর মনটা অনেক ফুরফুরে হয়ে যায়। চমৎকার পরিবেশ। চারপাশে বিশাল বিশাল গাছ। শিরীষ, অর্জুন, মেহগনি, অশোক, আম, কাঁঠাল, কদম, কাকডুমুর, কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া গাছের যেন অভাব নেই। সারা দিন শোনা যায় নানা রঙের পাখির কিচিরমিচির। পাখির ডাক শোনতে পিয়ানার খুব ভালো লাগে। স্কুল থেকে এসে পিয়ানা বাড়ির সামনে ফুলবাগান ঘুরে ঘুরে দেখে। পাড়ার স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব হয়। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করে পিয়ানা। আরফা পিয়ানার ভালো বন্ধু। ওরা ফুলবাগানে গিয়ে যখন দখিনা বাতাসে ফুলগুলো দুলতে দেখে তখন কী যে খুশি হয়। থেকে থেকে আরফার দেখা পায় না পিয়ানা। আরফার মা প্রায়ই ওকে নিয়ে গাঁয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। সেখানে আরফার কাজিন, চাচা ও দাদা-দাদি থাকেন। তখন পিয়ানার খুব খারাপ লাগে। বাসার সামনে ফুলবাগানে গেলে আবার ধীরে ধীরে মন ভালো হয়ে যায়। পিয়ানা বাগানের একটি গোলাপ ছুঁতেই ওর সামনে কী সুন্দর এক লালপরি এসে হাজির হয়। পিয়ানা তাকে দেখে হঠাৎ ভড়কে যায়।
লালপরি ওকে বলেন, আচমকা আমাকে দেখে ভয় পেয়েছ বুঝি?
তা ভয় তো একটু পেয়েছি। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে তুমি আমার সামনে হাজির হলে কেমনে?
পরিদের বলে-কয়ে আসার এত সময় কোথায়? আমি তোমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে দূরের এক রাজ্যে বেড়াতে যাচ্ছি। হঠাৎ তোমাকে দেখে বাগানে নেমেছি।
তাই? পিয়ানা বলে।
যখন দেখি তুমি ফুলবাগানে একা হাঁটছ তখনই তোমার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হলো আমার।
তুমি এসেছ, ভালো হয়েছে। বাহ্! কী সুন্দর তুমি। বড় বড় ডানা। এই ডানা দুটি দিয়েই তুমি ওড়ো বুঝি? পিয়ানা বলে।
হ্যাঁ।
আমারও তোমার মতো উড়তে ইচ্ছে করে। পাখির মতো গাছের ডালে ডালে বসতে ইচ্ছে করে। তোমার রাজ্যে নিয়ে যাবে আমাকে?
আরে আমার মিষ্টি বন্ধুটি। ঠিক আছে, একদিন তোমাকে আমাদের রাজ্যে বেড়াতে নিয়ে যাব।
পিয়ানা বলে, তোমাদের রাজ্য কোথায়?
অনেক... দূরে। মানুষের দৃষ্টির বাইরে। তবে মনের কাছাকাছি।
আমি যাব তোমার সঙ্গে।
আজ নয়, তোমার পড়ালেখা শেষে সত্যি সত্যি আমাদের রাজ্যে বেড়াতে নিয়ে যাব। লালপরি বলেন।
কিন্তু আম্মু যে বলেন, পরি, পরিরাজ্য, অচিনপুর- এসবই রূপকথার গল্প। বাস্তবের সঙ্গে এসবের মিল নেই।
পরি না থাকলে আমি তোমার সামনে এলাম কেমন করে?
তাই তো! পিয়ানা বলে।
থাক সেসব কথা। এখন আসি। আমার আবার অনেক দূরে যেতে হবে। এই পথ দিয়ে ফেরার সময় তুমি ফুলবাগানে থাকলে আবার কথা হবে তোমার সঙ্গে। আর হ্যাঁ, আজ থেকে তোমার বন্ধু হয়ে গেলাম আমি।
ঠিক আছে, পরিবন্ধু। পিয়ানা বলে।
ধন্যবাদ দিয়ে লালপরি হঠাৎ ফুলবাগান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পিয়ানা আকাশের দিকে তাকাতেই দেখে লালপরি উড়ে উড়ে যাচ্ছে। হাত নেড়ে টা-টা দিচ্ছে। পিয়ানা অনেকক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। আকাশ থেকে চোখ নামাতেই কানে ভেসে আসে শেষ বিকেলের পাখির কলকাকলি...।