পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশের মতো সিলেটেও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন সাধারণ মানুষ। নগরজুড়ে চলে আনন্দ মিছিল। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় সিলেট মহানগরীর সবকটি থানা ও ফাঁড়িতে। লুট করে নেয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি। পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় কিছু অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়। কিন্তু এখনো উদ্ধারের বাইরে রয়েছে ১৮টি অস্ত্র ও ৫১৯৯ রাউন্ড গুলি। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে লুণ্ঠিত এসব অস্ত্র ও গুলি ব্যবহারের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা না গেলে সেগুলো পেশাদার অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবরে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় সিলেট মহানগর পুলিশের আওতাধীন ছয়টি থানা ও কয়েকটি ফাঁড়িতে। পুলিশের ফাঁকা স্থাপনাগুলো থেকে লুটে নেয় অস্ত্র ও গুলি। বিভিন্ন স্থাপনায় রক্ষিত মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপথ ও আলামত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থানা ও ফাঁড়িতে পুলিশ ফিরলেও লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়নি পুরোপুরি। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় কিছুটা উদ্ধার হলেও এখনো হদিস মেলেনি বিপুল পরিমাণ গুলি ও অস্ত্রের। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্ট সিলেট মহানগরীতে পুলিশের স্থাপনাগুলো থেকে ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার ৭৪০ রাউন্ড গুলি লুট হয়। লুণ্ঠিত অস্ত্রের মধ্যে ছিল রাইফেল, শটগান ও পিস্তল। এর মধ্যে ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। এখনো উদ্ধারের বাইরে রয়ে গেছে ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার ১৯৯ রাউন্ড গুলি। এদিকে, লুণ্ঠিত সব অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার না হওয়ায় জননিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার না হওয়াটা মারাত্মক বিপজ্জনক। এসব অস্ত্র ও গুলি অপরাধীরা নানা অপকর্মে ব্যবহার করতে পারে। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিরোধেও এগুলো ব্যবহৃত হতে পারে। তাই মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এগুলো দ্রুত উদ্ধার হওয়া প্রয়োজন।’ এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘লুণ্ঠিত অনেক অস্ত্র ও গুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। অনেকে হয়তো এগুলো লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে ফেলে রেখেছে। অস্ত্রগুলোর অবস্থান জানলেও হয়তো কেউ ভয়ে পুলিশকে জানাচ্ছেন না। আর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অস্ত্র-গুলি উদ্ধার কষ্টসাধ্য। তবে পুলিশ বসে নেই, লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলি উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো হচ্ছে।’