২০১৯ সালে পিইসি পরীক্ষার পর মুখ দিয়ে লিখে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও চমক দেখিয়েছে যশোরের মনিরামপুরের লিতুনজিরা। গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নিজের ঝুড়িতে তুলেছে জিপিএ-৫। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় এ কৃতী শিক্ষার্থী। আর সেই স্বপ্ন পূরণে আবারও লিতুনজিরার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। লিতুনজিরার লেখাপড়ার জন্য গতকাল তার বাবার হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকার চেক। সেই সঙ্গে লিতুনজিরার স্বপ্ন পূরণে সব সময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গ্রুপটি।
জন্ম থেকেই হাত ও পা নেই লিতুনজিরার। এর আগে ২০১৯ সালে পিইসি পরীক্ষায় বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ পায় শারীরিক অপূর্ণাঙ্গতার কাছে হার না মানা এ মেধাবী শিক্ষার্থী। তখন গণমাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে লিতুনজিরার লেখাপড়ার জন্য ৫ লাখ টাকার চেক ও উপহারসামগ্রী পাঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান।
গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এবিজি টাওয়ারে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লিতুনজিরার বাবা হাবিবুর রহমানের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ইমদাদুল হক মিলন। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আবদুল বারী, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সেক্রেটারি মাসুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন। চেক পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, ২০১৯ সালে পিইসি পরীক্ষায় তাঁর মেয়ে বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ পায়। সে খবর পেয়ে হঠাৎ একদিন বসুন্ধরা গ্রুপের লোকজন তাঁর বাড়িতে হাজির হন। তাঁরা লিতুনজিরার হাতে ৫ লাখ টাকার চেক ও উপহার তুলে দেন। সে টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করে যে মুনাফা পাচ্ছেন, তা লিতুনজিরার লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করছেন। এবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও ৫ লাখ টাকা দিলেন। এতে লিতুনজিরার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও মসৃণ হবে। বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য অন্তর থেকে অনেক দোয়া। তিনি তাঁর মেয়ের জন্য সবার দোয়া চান। গতকাল লিতুনজিরার বাবার হাতে চেক প্রদানকালে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, সংবাদপত্রে লিতুনজিরার জিপিএ-৫ (গোল্ডেন এ প্লাস) পাওয়ার খবর পেয়েই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান তাঁকে ফোন দিয়ে মেয়েটির এগিয়ে যেতে কী লাগবে সেজন্য সব ব্যবস্থা করতে বলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের মানবিক কাজ বলে শেষ করা যাবে না মন্তব্য করে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ শুভসংঘের মাধ্যমে করোনার সময় উত্তরবঙ্গে ৪৮ হাজার পরিবারকে এক মাসের খাদ্যসহায়তা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি দুর্গম চরে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল করেছি। শতাধিক মানুষকে ঘর করে দিয়েছি, শতাধিক মানুষকে দোকান করে দিয়েছি, ভ্যান কিনে দিয়েছি। দুই-আড়াই শ প্রতিবন্ধী মানুষকে হুইলচেয়ার দিয়েছি। তিন হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়মিত বৃত্তি দিচ্ছি, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন প্রায় ছয় শ। আরও চার শ যোগ করা হবে। শুভসংঘের সহায়তা নিয়ে অন্তত ৫০ জন চিকিৎসক ইতোমধ্যে পাস করে বেরিয়েছেন। বাঞ্ছারামপুরে প্রায় ৩৭ হাজার নারীকে স্বাবলম্বী করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। সুদ ও সার্ভিসচার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। সারা দেশে নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’