অ্যান্ড্রু কুমো, দীর্ঘ এক দশক নিউইয়র্কের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অবশেষে নারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের মুখে পড়ে ২০২১ সালে পদত্যাগ করেন তিনি। সে সময় অন্তত ১১ জন নারী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন।
কুমোর বিরুদ্ধে ওই সময় আরও একটি গুরুতর অভিযোগ ওঠে, সেটি হলো- নিউইয়র্কের নার্সিংহোমগুলোতে কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কম দেখানো হয়েছে। অথচ মহামারি চলাকালে তার দৈনিক সংবাদ সম্মেলন তাকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি এনে দেয়। তবে অ্যান্ড্রু কুমো থামতে রাজি নন।
গত মাসে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমো শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। বিজয়ী হন রাজনীতিতে নবাগত, নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ পরিচয় দেওয়া জোহরান মামদানি। রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা অ্যান্ড্রু কুমো মনে করেন, এ প্রার্থিতা তার জন্য সহজলভ্য হবে। সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বীকে আটকাতে পারবেন না, এমন আঁচ করতে পেরে ভোটের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই অ্যান্ড্রু কুমো হার স্বীকার করে নেন। কিন্তু গত সোমবার আবারও নির্বাচনী লড়াইয়ে ফেরেন তিনি। তবে এবার তিনি ফিরেছেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। জানিয়ে দিয়েছেন, এবার জয়ের লক্ষ্যেই নেমেছেন মাঠে।
দেড় মিনিটের একটি ভিডিওতে ৬৭ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু কুমোকে গ্রীষ্মের নিত্যনৈমিত্তিক পোশাকে দেখা যায়। নিউইয়র্কের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মানুষের সঙ্গে করমর্দন করছেন তিনি। ভিডিওটি অনেকটাই ৩৩ বছর বয়সী মামদানির সফল প্রচার কৌশলের মতো করেই নির্মিত।
ভিডিওতে তিনি মামদানির নাম বিকৃত করে ‘মনদানি’ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ‘মনদানি’ চটকদার স্লোগান দিচ্ছেন, কিন্তু কার্যকর কোনও সমাধান নেই।”
প্রসঙ্গত, প্রাইমারি বিতর্কে তিনি মামদানির নাম বারবার ভুল উচ্চারণ করেছিলেন, এবারও হয়তো সেটাই করেছেন।
অ্যান্ড্রু কুমো আরও বলেন, “আপনারা এমন একজন মেয়র পাওয়ার যোগ্য, যার নিউইয়র্ককে সাশ্রয়ী করে তোলার জন্য অভিজ্ঞতা ও বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা আছে।”
নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে জানা গেছে, অ্যান্ড্রু কুমো তার সমর্থকদের পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, তিনি সতর্ক ছিলেন। কেননা, বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছিল, তারা এগিয়ে আছেন।
অ্যান্ড্রু কুমো আরও বলেন, “একটি অধিকতর ন্যায্য, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নিউইয়র্কের জন্য আমি আমার পরিকল্পনা যথেষ্ট আগ্রাসীভাবে তুলে ধরতে পারিনি। মামদানির অবাস্তব প্রস্তাব আর বিভাজনমূলক এজেন্ডা খণ্ডনেও আমি ব্যর্থ ছিলাম। তবে এবার সেই ভুল আর করব না, এ কথা আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, অ্যান্ড্রু কুমোর প্রচারের বড় একটি দুর্বলতা ছিল, সাংবাদিকদের মুখোমুখি না হওয়া ও পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্ট ছেড়ে বের না হওয়া।
বহিরাগত প্রভাবশালী গোষ্ঠী হেজ ফান্ড মালিক ও বিলিয়নিয়ার সিইওদের কাছ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল জোগাড় করেও মামদানির ৫৬ শতাংশ ভোটের বিপরীতে অ্যান্ড্রু কুমো পান মাত্র ৪৮ শতাংশ ভোট।
ইসরায়েলপন্থী সমর্থন
অ্যান্ড্রু কুমোর পেছনে ডেমোক্রেটিক দলের পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের সমর্থন ছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা ও নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শুমার। তারা কুমোর পরাজয়ের পর মামদানিকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর তাকে (মামদানি) সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা।
এ সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ ছিল মামদানির স্পষ্ট ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান। তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আন্দোলনের সমর্থক এবং সবার সমানাধিকারের পাশাপাশি এক রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে মত দেন।
শুধু নিউইয়র্ক সিটিতেই ১০ লাখের বেশি ইহুদি বাস করেন। এটি ইসরায়েল ছাড়া যেকোনও শহরের চেয়ে বেশি। তাদের অনেকে মার্কিন-ইসরায়েল দ্বৈত নাগরিক।
মামদানির বিপরীতে অ্যান্ড্রু কুমো বরাবরই নিজেকে ইসরায়েলপন্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন। মামদানির প্রচারশিবির অভিযোগ করেছে, অ্যান্ড্রু কুমোর প্রচারাভিযান ইসলামবিদ্বেষমূলক ছিল।
নেতানিয়াহু ও অ্যান্ড্রু কুমোর ঘনিষ্ঠতা
ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে অ্যান্ড্রু কুমো বহুদিন ধরেই ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর পছন্দের প্রার্থী। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার পর গাজা যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটে, তিনি ইসরায়েলপন্থী অবস্থান আরও জোরদার করেন।
এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের প্রায় অর্ধেকই শিশু।
২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে, তখন অ্যান্ড্রু কুমো তার পক্ষে আইনি সহায়তা দলে যোগ দেন।
সে সময় অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, “আইসিসির পরোয়ানার বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে পেরে আমি গর্বিত। আর আমি গর্বিত ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিতে পেরে।”
অন্যদিকে, মামদানি নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নেতানিয়াহুকে নিউইয়র্ক এলে গ্রেফতার করা হবে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই
বিডি প্রতিদিন/একেএ