জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সংস্কার আন্দোলন পরিচালনাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সংস্থাটি। বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় গতকাল আরও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্দোলনের ফলে রাজস্ব আহরণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে গঠিত হয়েছে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি।
গতকাল এনবিআরের বোর্ড প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় সচিব উম্মে আয়মান কাশমীর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এসব বরখাস্তের তথ্য জানানো হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন কর অঞ্চল-২-এর কর পরিদর্শক লোকমান হোসেন, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট ঢাকার কর পরিদর্শক নাজমুল হাসান ও আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছালেহা খাতুন সাথী ও রৌশনারা আক্তার, কর অঞ্চল-১৪-এর প্রধান সহকারী বি এম সবুজ, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের সিপাহী সালেক খান। কর ও কাস্টমস প্রশাসনকে এ আদেশ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের জেরে এখন পর্যন্ত মোট ২৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার একই অভিযোগে ১৪ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদার। এ ছাড়া এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে হোয়াটসঅ্যাপে কটূক্তির অভিযোগে কর অঞ্চল-১০-এর নিরাপত্তাপ্রহরী মো. সেলিম মিয়াকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন এবং ২ জুলাই এনবিআরের কর ও কাস্টমস বিভাগের আরও চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তাঁদের শূন্যস্থান পূরণে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্দোলনের ক্ষতি নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি : এদিকে চলমান আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আহরণে ব্যাঘাত এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরূপণে নয় সদস্যের একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। গতকাল আইআরডির যুগ্মসচিব সৈয়দ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি; এনবিআর, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর একজন করে প্রতিনিধি; আইআরডির একজন উপসচিব সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটি ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বন্ধ থাকাকালে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ এবং গত দুই মাসে এনবিআরের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরে কর্মসূচির কারণে কী পরিমাণ রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হয়েছে তা নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া শুল্কায়ন কার্যক্রমে ব্যাঘাত এবং দেশের স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সৃষ্ট প্রভাবসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতি বিশ্লেষণ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।