আমেরিকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ দেড় লক্ষাধিক মানুষের ১০ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। মাত্র ছয় মাসে এ কাণ্ড করা হয়েছে। ফেডারেল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ডিজিটাল সিস্টেমে সহজসরল আমেরিকানদের গোপন তথ্য অবাধে চুরি হচ্ছে এবং প্রতারকরা চুরিকৃত তথ্য দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিদিনই অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে। এসব ফোন যারা রিসিভ করে কথা বলতে থাকেন, তারাই ভিকটিম হচ্ছেন। কারণ, কথা বলার সময়ই প্রতারকরা যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নেয়।
জানা গেছে, প্রতারকরা নানান সংস্থার কর্মী পরিচয়ে নগদ অর্থ সহায়তার (মঞ্জুরি, অনুদান) আশ্বাস দিয়ে থাকে। টেলিফোনেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডলার হস্তান্তরের টোপ দিচ্ছে। এভাবে কখনোই কোনো অনুদানের অর্থ পাওয়া যায় না এবং এটাই বাস্তবতা হলেও অনেকে তা ভুলে যান প্রতারকদের কথার ফুলঝুরিতে। অভাব-অনটনে থাকা মানুষ লোভে পড়ে এভাবেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, অনেক আমেরিকানের সঙ্গে বাংলাদেশিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া ছাড়াও ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে বিপুল অর্থ ড্র করছে প্রতারকরা। এমন কি পুষ্টিকর খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি তথা স্ন্যাপের (ফুডস্ট্যাম্প) বরাদ্দকৃত অর্থও সরিয়ে নিচ্ছে কেনাকাটার আড়ালে। এ আচরণকে ফেডারেল ক্রাইম হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অভিযোগের প্রতি প্রশাসন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে আসকারা পাচ্ছে প্রতারকরা।
আরও জানা গেছে, টেলিফোনের পাশাপাশি ভুয়া ইমেল অথবা টেক্সট পাঠানো হচ্ছে আইআরএস, পুলিশ অথবা হেল্্থ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নামে এবং স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করার পরই প্রতারকরা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার নানান পন্থা অবলম্বন করছে। কখনো কখনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ক্রেডিট কার্ড/ফুডস্ট্যাম্পের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং প্রতারক চক্রের কিছু পয়েন্ট থেকে ওইসব কার্ড চার্জ করে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ইদানীং প্রতারকরা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, মোটা অঙ্কের চেক ইস্যু করা হচ্ছে টার্গেটেড ভিকটিমের বরাবরে। বলা হচ্ছে, জরুরিভাবে সেই চেক ভাঙানোর আগেই যেন কিছু ডলার পাঠানো হয় (প্রতারকদের লোকজনের কাছে)। সেই চেক পেয়ে যারা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতে পেলেন বলে ভাবছেন তারাই ঠকছেন। কারণ, চেকটি জাল। ব্যাংকে জমা দেওয়ার কদিন পর তা জানা সম্ভব হয় ‘বাউন্স’র নোটিস পাওয়ার পর। এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন মাঠে রয়েছেন কিন্তু এত বেশি ঘটনা ঘটছে যে, তারাও কুলিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছেন না। জানা গেছে, অধিকাংশ চক্রই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে তা ক্রমান্বয়ে ব্যাপক হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, পেনসিলভেনিয়া, ওয়াশিংটন মেট্রো, মিশিগান, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, কানেকটিকাটে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি প্রতারণার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সমীপে অভিযোগ করেও সদুত্তর পাননি।