গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশস্থলে হামলার ঘটনায় সারা দেশে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল এনসিপির সমাবেশ ও নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
গতকাল বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সারা দেশে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের রাস্তা অবরোধ করে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালনের আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরপরই রাজধানী ঢাকার শাহবাগ, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনুসারীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। পরে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সংগঠনটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের পক্ষ হয়ে তার ফেসবুক পোস্টে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ব্লকেড কর্মসূচি পালন না করার আহ্বান জানান। এর বিপরীতে তিনি সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও ফেসবুক পোস্টে ব্লকেড তুলে নেতা-কর্মীদের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানায়। পরে নেতা-কর্মীরা রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিল থেকে তারা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্রুত বিচারসহ গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জসহ সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আওয়ালী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ। এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর ও প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উত্তর ও দক্ষিণ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির।
এ ছাড়া এনসিপির ওপর হামলার ঘটনায় দলটির যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচির ডাক দেয়। এরপর সংগঠনটির একদল নেতা-কর্মী মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে বিক্ষোভ করেন। ৪০ মিনিট পর তারা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে হামলার ঘটনায় গতকাল রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, নওগাঁ, রাজশাহী, মাদারীপুর, কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বান্দরবান, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীরা। চট্টগ্রাম মহানগরীর দুই নম্বর গেটে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর জিইসি মোড় ঘুরে আবার দুই নম্বর গেট এলাকায় এসে কর্মসূচি সমাপ্ত করে। লক্ষ্মীপুরের আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় আড়াই ঘণ্টা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খাঁয়ের ভূঁইয়ার গাড়িও আটকে দেয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সড়ক ছাড়েন তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের লোকনাথ টেংকেরপাড় এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে এনসিপির নেতারা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।