পেশাদার ঢঙের অফিস, চটকদার ওয়েবসাইট ও প্রলোভনমূলক প্রতিশ্রুতি। এই রূপে আবৃত ছিল একটি সুচারু পরিকল্পিত প্রতারণা প্রতিষ্ঠান; যার ফাঁদে পা দিয়ে আরব আমিরাত জুড়ে প্রায় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পড়েছে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে।
রাক মেরিন সার্ভিসেস নামের একটি কোম্পানি, দুবাইয়ের দেইরার আল রিম টাওয়ারের ৬০৪, ৬০৫ ও ৬০৬ নম্বর অফিস থেকে পরিচালিত হতো। নিজেকে একটি স্বনামধন্য শিপ চান্ডলার হিসেবে তুলে ধরেছিলো তারা।
প্রথমে অল্প কিছু পণ্যের নগদ অর্থ পরিশোধ করে তারা সরবরাহকারীদের আস্থা অর্জন করে। এরপর শুরু হয় বড় অর্ডার—পোস্ট-ডেটেড চেক দিয়ে। কিন্তু চেক ক্লিয়ার হওয়ার আগেই জুলাইর ১০ তারিখের তারা গা-ঢাকা দেয়, অফিস ফাঁকা করে পালিয়ে যায়।
চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হলো, তারা যে পণ্যগুলো নিয়েছে, তার মধ্যে শুধু শিল্পপণ্যই নয়—প্রণ, মুরগি, গরুর মাংসের কারকাস, ল্যাপটপ, আইফোন, ফ্লাইট টিকিট, পানি গরম করার যন্ত্র, ডিটারজেন্ট, মসলা, আসবাব ও এমনকি এনার্জি ড্রিংকও রয়েছে।
একটি গুগল ড্রাইভ ফোল্ডারে থাকা তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৯৫টি কোম্পানি এই প্রতারণার শিকার হয়েছে। আর তাদের সম্মিলিত আর্থিক ক্ষতি ছাড়িয়ে গেছে ২৫ মিলিয়ন দিরহাম।
রাক মেরিন ছাড়াও তাদের সাথে যুক্ত ছিল রাক ইম্পেক্স গুডস হোলসেলার ও রাক ফ্যাসিলিটি। তিনটি কোম্পানিই এখন নিখোঁজ। অফিস বন্ধ, ফোন সুইচ অফ, গুদাম ফাঁকা।
দুবাই-ভিত্তিক ইউক্রেনীয় ব্যবসায়ী আন্দ্রেই পালুখিন বলেন, আমি ৯০ হাজার দিরহামের ৩০০টি ওয়াটার হিটার সরবরাহ করেছিলাম। তারা আমাদের অফিসে ডেকেছিল, এমনকি গুদাম দেখিয়েছিল। খুবই পেশাদার মনে হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরেই চেক বাউন্স করে।
ভিস্তা মেরিটাইম ট্রাভেল-এর জেনারেল ম্যানেজার ফয়জান বলেন, আমরা ১ লাখ ৭৮ হাজার দিরহামের আন্তর্জাতিক বিমান টিকিট ও হোটেল বুকিং দিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি, সেগুলো অন্যদের কাছে পুনরায় বিক্রি করা হয়েছে।
অন্য এক ট্রাভেল এজেন্সি জানায়, তারা ৭০৭টি টিকিট ইস্যু করে ছয় লাখ ৭০ হাজার দিরহাম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
আল জারিন ইলেকট্রিক্যাল-এর ইরশাদ জাকারিয়া জানান, তিনি গত বছর এআরএস ইলেক্ট্রনিক্স নামের আরেক প্রতারক কোম্পানির মাধ্যমে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম হারিয়েছিলেন। এবার রাক মেরিনের আরও এক লাখ ৫৯ হাজার দিরহামের কেবল সরবরাহ করে প্রতারিত হন।
ওডেসা মেরিন শিপচ্যান্ডলারস প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার দিরহামের খাদ্যপণ্য সরবরাহ করেছিল। যার মধ্যে ছিল ২০০০ কেজি চিংড়ি ও ৯ কেজি মুরগি।
কিছু ব্যবসায়ী আল মুরকাবাত থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও তাদের জানানো হয়েছে, চেক বাউন্স না হওয়া পর্যন্ত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
একজন স্টিল সাপ্লায়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা শুধু বকেয়া পাওনার বিষয় নয়, এটা সুপরিকল্পিত প্রতারণা।
রাক মেরিন জাল ভ্যাট সার্টিফিকেট ও নকল অডিট রিপোর্ট পেশ করেছিল। তদন্তে জানা গেছে, ওই অডিট ফার্ম অতীতেও একাধিক প্রতারণার সাথে জড়িত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেছিল।
বর্তমানে তাদের অধিকাংশ গুদাম খালি হলেও শারজাহর এমিরেটস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটিতে একটি গুদামে এখনো কিছু পণ্য অবশিষ্ট আছে—ফর্কলিফ্ট, কেমিক্যাল ও খাদ্যপণ্য।
সূত্র: খালিজ টাইমস
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল