ময়মনসিংহ শহরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অধীনে থাকা একটি জরাজীর্ণ ভবন ভাঙা নিয়ে সম্প্রতি কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যেসব সংবাদে দাবি করা হয়েছে যে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক সম্পত্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছে—তা সঠিক নয়। আর্কাইভাল রেকর্ড ও স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, বর্তমান ভাঙা ভবনটির সঙ্গে অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনও সম্পর্ক ছিল না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শশী লজ’-এর পাশে থাকা এই ভবনটি স্থানীয় জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী তার কর্মচারীদের জন্য নির্মাণ করেছিলেন।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জেলা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। জমিটি সরকারি খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ এবং রায় পরিবারের কোনও সম্পত্তি নয়।
স্থানীয় প্রবীণ সাহিত্যিক ও গবেষকরা এ বিষয়ে সরকারকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক কাঙাল শাহীন, অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, কবি ফরিদ আহমেদ দুলালসহ ময়মনসিংহের নাগরিক সমাজের অনেকে।
সকলেই জানান, রায় পরিবারের পৈতৃক বাড়ি ‘হরিকিশোর রায় রোড’-এ অবস্থিত ছিল এবং তা বহু আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। সেখানে এখন একটি বহুতল ভবন রয়েছে।
চলমান প্রকল্প সম্পর্কে মন্ত্রণালয় জানায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় শিশু একাডেমির ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে এবং ২০১৪ সালে কার্যক্রম অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে আধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য নিলামের মাধ্যমে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ৭ মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে জনগণকে জানানো হয়।
প্রত্নতত্ত্ব গবেষক স্বপন ধরও নিশ্চিত করেছেন যে এটি কোনওভাবে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি নয় এবং এটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবেও তালিকাভুক্ত নয়।
সরকার সকল মহলকে বিভ্রান্তিকর ও তথ্যভিত্তিক নয় এমন সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে, যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সকল রেকর্ড ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ভাঙা ভবনটির সঙ্গে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। ময়মনসিংহের শিশুদের স্বার্থে আধুনিক ভবন নির্মাণে সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।”
বিডি প্রতিদিন/একেএ