ফটিকছড়িতে চিকিৎসা সেবার নামে বেসরকারী সংস্থা 'কমিউনিটি এ্যাকটিভিটিস ফর রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট (কারা)' স্বাস্থ্যসেবার কার্ড বিক্রির মাধ্যমে ২৫০ জন হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যসহ চক্রের পাঁচজনকে আটক করেছে ভূজপুর থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সংস্থাটির ভূজপুর কাজিরহাট বাজারে অবস্থিত যমুনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর অস্থায়ী কার্যালয়ে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানান ভুক্তভোগীরা। এসময় পরিস্থিতি টের পেরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সংস্থাটি উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ও প্রতারক চক্রের মুলহোতা আবু বক্কর প্রকাশ খোরশেদ (৪৮)। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটকের পর বুধবার সকালে আদালতে প্রেরণ করে ভূজপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সিংহরিয়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ও ভুক্তভোগী রুমা আক্তার বাদী হয়ে ভূজপুর থানায় একটি প্রতারণা মামলা করেন।
আটককৃতরা হলেন- উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের কৈয়া পুকিয়া এলাকার রশিক চন্দ্র ত্রিপুরার পুত্র বিজয় কুমার ত্রিপুরা (২৭), ভূজপুর ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা ইউপি সদস্য ও ওই এলাকার মৃত লাল মিয়ার কন্যা বেবি আক্তার (৪৫), হারুয়ালছড়ি ইউপির রেজাউল করিমের কন্যা সাহেলা আক্তার (২২), পূর্ব ভূজপুর এলাকার সেলিমের স্ত্রী বিবি ফাতেমা (৩৯) ও সওদাগরপাড়ার মৃত মনির আহমদের স্ত্রী পারভীন বেগম (৪৮)। এছাড়াও আসামী করা হয় মুলহোতা ও পশ্চিম সুয়াবিল এলাকার মোঃ নুরুল ইসলামের পুত্র আবু বক্কর প্রকাশ খোরশেদকেও(৪৮)।
সুত্র জানান, ভূজপুর থানার কয়েকটি গ্রামের হতদরিদ্রের স্বল্পমূল্যে মালামাল সরবারহ ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা বলে ২৪০ পরিবার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয় কমিউনিটি এ্যাকটিভিটিস ফর রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট (কারা) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটি প্রথমে সদস্য ফি বাবদ ৫০০ টাকা করে নেয়। পরে কারা স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি কার্যক্রমে বিভিন্ন মুদি মালামাল সামগ্রীর প্যাকেট বিতরণের নামে দেড় হাজার টাকা মোট ২৪০ পরিবার থেকে টাকা জমা নেয় চক্রটি। পরে সে মুদি মালামাল সংগ্রহ করতে গিয়ে উপকারভোগীরা দেখতে পান তাদেরকে যে প্যাকেটটি সরবারহ করা হচ্ছে সেটির বর্তমান বাজারমূল্য ১১০০ টাকা। এবং সরবারহকৃত পন্যগুলো নিম্নমানের।
পরে উপকারভোগীরা বেশি টাকা নিয়ে কম দাম ও নিম্নমানের পণ্য সরবারহের কারণ জানতে চাইলে সংস্থার কেউ সুদুত্তর পারেনি। পরে উপকারভোগীরা প্রতিবাদ জানালে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় চক্রের মুলহোতা খোরশেদ। কিন্তু উৎসুক জনতা স্থানীয় ইউপি সদস্য বেবী আক্তারসহ চক্রের পাঁচজনকে জিম্মি করে রাখে। পরে তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
মামলার বাদী রুমা আক্তার বলেন, 'সংস্থাটি আমাদেরকে চিকিৎসাসেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দেয়ার নামে দুই হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তারা ১১০০ টাকা মূল্যের পণ্য দিয়ে আমাদের ঠকিয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। আমাদের মতো হতদরিদ্র মানুষের সাথে তারা প্রতারণা করছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।'
এনজিও সংস্থা কমিউনিটি এ্যাকটিভিটিস ফর রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট (কারা) চেয়ারম্যান কাজী তাইজুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, 'ফটিকছড়ি ভূজপুর এলাকায় গত ৬ মাস যাবৎ আমাদের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যদি কেউ আমাদের নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম চালিয়ে থাকে তদন্ত করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।'
ভূজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যকে প্রতারণার দায়ে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান এসএমএইচ শাহজাহান চৌধুরী শিপন বলেন, 'তার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ ছিল।'
এ ব্যাপারে ভূজপুর থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল আলম জানান, 'এই ঘটনা থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। পাঁচজন আসামিকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেছি। ঘটনার মূল হোতা পলাতক আছে। তাকে ধরার প্রক্রিয়া চলছে।'
বিডি প্রতিদিন/নাজিম