‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়ার প্রতিবাদে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দিল্লি সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এখন থেকে আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলব। কারণ, বাংলা নবজাগরণের জন্ম দেয়, বাংলা রবীন্দ্রনাথের জন্ম দেয়, নজরুলের জন্ম দেয়।’
গতকাল সকালে কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু করা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। মিছিলটি ডোরিনা ক্রসিংয়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে ডোরিনা ক্রসিংয়ের সভামঞ্চ থেকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ‘আমি ঠিক করেছি আমি এবার বেশি করে বাংলায় কথা বলব। ক্ষমতা থাকলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেখুন।’ মমতা বলেন, ‘ভারত সরকার একটা নোটিফিকেশন জারি করেছে। যে রাজ্যগুলোতে বিজেপি ক্ষমতায় আছে সেখানে এ নোটিফিকেশন পাঠিয়ে বলা হয়েছে-বাংলা ভাষায় কথা বললে যাকে সন্দেহ হবে, গ্রেপ্তার করবেন এবং তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবেন। আমরা সেই নোটিফিকেশন নিয়ে চ্যালেঞ্জ করব। ওরা লুকিয়ে লুকিয়ে করেছে। ভারত সরকার এবং বিজেপি পার্টির এই আচরণে আমি অত্যন্ত লজ্জিত, ব্যথিত, দুঃখিত, মর্মাহত। এটা দেশের জরুরি অবস্থা থেকেও বেশি। কোনো দিন হয়তো দিল্লিতে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদেরও বাংলা বলার কারণে আটকে রাখা হবে।’
তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘যারা দেশ স্বাধীন করেছেন, যারা ভারতের জাতীয় সংগীত গেয়েছে এনআরসির নামে তাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে, তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।’ মমতা বলেন, ‘অনুপ্রবেশ হলে তার দায় বিজেপির, কারণ সীমান্তের রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের, যেটা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাদের হাতে সিআরপিএফ আছে বিএসএফ আছে। যদি প্লেনে করে কেউ আসে সেটাও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। ওটা আমাদের দেখার কাজ আমাদের নয়। তবে আপনারা কেন মিথ্যা কথা বলছেন?’ মমতা ফের বলেন, ‘আমি সতর্কবার্তা দিলাম। মারব না, কাটব না। আবার ভাষাও বিকৃতি করব না। আমরা পরিষ্কার বলে যাই, যদি না থামেন তবে আগামী দিনে আপনাদের থামাতে কী করা দরকার সেটা বুঝে নেবেন। দিল্লি উত্তর প্রদেশ বা অন্য কোনো রাজ্যে অত্যাচার হলে ওই রাজ্যগুলোতেও প্রতিবাদ হবে আবার পশ্চিমবঙ্গেও তার প্রতিবাদ হবে। বাংলা আমাদের দখলে আছে, থাকবে। আগামী দিন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লিও দখল করব। ২০২৬ ফর বেঙ্গল। তারপর দিল্লির যে নির্বাচন হবে সেটা আমাদের ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতা পাবে।’ মমতা ছাড়াও এই মিছিলে অংশ নেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ফায়ার সার্ভিস মন্ত্রী সুজিত বসু, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সংসদ সদস্য সায়নী ঘোষ, দোলা সেন, বিধায়ক নয়না ব্যানার্জিসহ দলের কাউন্সিলর দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা হাঁটেন মমতাসহ দলের নেতা-নেত্রীরা।