গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মহত্যার হার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে অন্তত ১২ শতাংশ সেনা সদস্য পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার ( পিপিএসডি) বা মানসিক আঘাতজনিত বিষণ্ণতায় ভুগছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। যা আগের বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম আই টোয়েন্টি ফোর নিউজ জানিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হওয়ার বাইরেও একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধফেরত সেনাদের মানসিক বিপর্যয় ও আত্মহত্যার প্রবণতা।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায়, ইসরায়েল-অধিকৃত ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলের এক ঘাঁটিতে নাহাল ব্রিগেডের এক সেনা সদস্য আত্মহত্যা করেন। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিয়ে চারজন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। যাদের মধ্যে দুজন সক্রিয় সদস্য এবং দুজন রিজার্ভ সেনা ছিলেন।
এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, যুদ্ধের ভয়াবহতা শুধু ফিলিস্তিনিদের জীবনেই নয়, ইসরায়েলি সেনাদের মনোজগতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক সেনা যুদ্ধ শেষে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছেন এবং তারা পুনরায় সামরিক দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়ছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫,০০০ সেনা বর্তমানে নিয়মিত মানসিক পর্যবেক্ষণে রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সংক্রান্ত কারণে চিকিৎসাধীন।
ইসরায়েলি পত্রিকা হরেৎজ-এর পূর্ববর্তী এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ৭ জন সেনা আত্মহত্যা করেন। ২০২৪ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে, আর ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই প্রায় ১৪ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আত্মহত্যার ঘটনা ইসরায়েলি সামরিক কাঠামোর গভীর সংকটকে তুলে ধরছে। যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণাও যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি তুলেছে। তারা বলছে, যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব শুধু শত্রু পক্ষের নয় বরং তা নিজের বাহিনীকেও ধ্বংস করে দিতে পারে, যদি না পর্যাপ্ত মনো-চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গাজা যুদ্ধ চলমান থাকায় আত্মহত্যার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা এবং নৈতিক কাঠামোর ওপর প্রশ্ন তুলছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল