দুনিয়াজুড়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের সোল এজেন্ট হিসেবে যে দেশটি দাবি করে থাকে, তার নাম আমেরিকা। অর্থ ও সামরিক শক্তিতে তাদের কোনো তুলনা নেই। নিজেদের মানবাধিকারের সোল এজেন্ট ভাবলেও আমেরিকার ইতিহাস মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য দৃষ্টান্তে ভরা। সবারই জানা, ৫০টি রাজ্য নিয়ে গঠিত দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিমান এই দেশ। ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবরের আগে আমেরিকার নাম বাইরের পৃথিবীতে ছিল অজানা। ইউরোপের মানুষ আমেরিকায় পা দিয়ে সে দেশের সরলপ্রাণ আদিবাসীদের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালায়। নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে হাজার হাজার আদিবাসী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় বিভিন্ন সময়। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ছিল ৪৯টি রাজ্য। একই বছর ৫০তম রাজ্য হিসেবে হাওয়াই যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। যে রাজ্যটি আমেরিকার একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান। হাওয়াই ছিল স্বাধীন দেশ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় জাপানের কাছাকাছি এর অবস্থান। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান হাওয়াই সফর করেন সে দেশের সরকার ও সামরিক বাহিনীর আমন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কমান্ডার জেনারেল ডেনিস রেইমারের আতিথ্য গ্রহণ করেন তিনি। দুই দশক পর এক ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তিনি হাওয়াইয়ের আদিবাসীদের ওপর আমেরিকানদের হত্যাযজ্ঞের যে চিত্র তুলে ধরেন, তার কোনো তুলনা নেই। হাওয়াইয়ের রাজা ছিলেন স্বাধীনচেতা ও প্রজাদরদি। তাঁর দেশে ব্যবসাবাণিজ্যের নামে হাজির হয় আমেরিকানরা। রাজা তাদের স্বাগত জানান। অচিরেই আমেরিকানরা স্বরূপে আবির্ভূত হয়। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে হাওয়াইয়ের আদিবাসীরা। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত আমেরিকানদের দৌরাত্ম্যে আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে হাওয়াইয়ের রাজা আদিবাসীদের সাগরপাড়ের এক পাহাড়ে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সমবেত লোকদের উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। বলেন, হাওয়াইয়ের মানুষ পরাজয় মেনে নিতে রাজি নয়। আত্মসমর্পণের কথাও ভাবতে চায় না তারা। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মানুষ সাগরের সন্তান। তিনি চান আমেরিকানদের কাছে আত্মসমর্পণের বদলে তারা যেন সাগরে ঝাঁপ দেয়। এ কথা বলেই রাজা তাঁর হাঙরের দাঁতখচিত কমান্ড স্টিক সমুদ্রের দিকে নির্দেশ করে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নিচে গভীর প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তাল স্রোতে ঝাঁপ দেন। নিজেকে উৎসর্গ করেন স্বাধীনতাহীনতার লজ্জা মেনে নেওয়ার বদলে। সমবেত হাজার হাজার দ্বীপবাসী রাজাকে অনুসরণ করে সাগরে ঝাঁপ দেন একইভাবে। হাওয়াইয়ের একজন মানুষও অবশিষ্ট থাকল না আত্মসমর্পণের জন্য। কোনো মানুষ থাকল না পরাজয়বরণের জন্য। বরেণ্য নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ে তাঁর অমর উপন্যাসে বলেছেন, মানুষ ধ্বংস হতে পারে, বিনাশ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু কখনোই পরাজয়বরণ করতে পারে না। নোবেলজয়ী মহান লেখক হাওয়াইবাসীর অতুলনীয় আত্মত্যাগকে স্মরণ করেই ওই কথাগুলো লিখেছিলেন।
দুই.
ডেটলাইন ১২ অক্টোবর ১৪৯২। কলঙ্কিত একটি দিন। কলম্বাস নামের এক ইতালীয় এদিনটিতে আমেরিকা আবিষ্কার করেন। তাঁর এই আবিষ্কারে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ভূমিকা রাখেন স্পেনের রাজা। সেহেতু আমেরিকা আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্পেনের নাম। জন্মসূত্রে ইতালীয় হলেও কলম্বাস তাঁর সমুদ্র অভিযানে অংশ নেন স্পেনের হয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ। সামরিক দিক থেকে তারা যেমন সেরা, তেমন সেরা অর্থনীতিতেও। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাও পালন করছে এই দেশটি। মজার ব্যাপার হলো, পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে যখন আমেরিকা আবিষ্কৃত হয়, তখন এটিকে খুব একটা বড় অর্জন বলে ভাবেনি স্পেনের মানুষ। এমনকি আমেরিকার মতো কোনো দেশ আবিষ্কারের পরিকল্পনা পেশ করলে স্পেনের রাজা ও রানি কলম্বাসের পেছনে অঢেল অর্থও ঢালতেন না। কলম্বাস মূলত ভারতে পৌঁছানোর নতুন জলপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে ১৪৯২ সালে আমেরিকা মহাদেশে পা দেন। ভারত ছিল সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ। ইউরোপীয়রা সে সময় এশিয়া বলতেও বুঝত ভারতকে। ভারতের সঙ্গে তখন ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ছিল। তবে সে বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক ছিল আরবরা। সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রকও ছিল আরব তথা মুসলমানরা।
ইউরোপে তখন ছিল জাগরণের যুগ। তারা সম্পদশালী ভারতের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখত। এ স্বপ্ন পূরণে বিকল্প সাগরপথ আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছিল বিভিন্ন দেশ। কিন্তু সৌভাগ্য হাতছানি দেয় স্পেনের দিকে। আমেরিকার ইতিহাসে কলম্বাসকে সে দেশের আবিষ্কারক হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কলম্বাসের ৩০০ বছর আগে মুসলমানরা এ মহাদেশ আবিষ্কার করেন, এমন ধারণা কোনো কোনো ইতিহাসবিদের। তবে এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ নেই বললে চলে। ইতিহাসবিদের একাংশের দাবি, ৩ হাজার বছর আগে মিসরের রাজা দ্বিতীয় রামেসিস আমেরিকা আবিষ্কার করেন। স্বীকার করতেই হবে, ৩ হাজার বছর আগেও মিসর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর দেশ। মানবসভ্যতার প্রথম বিকাশ ঘটেছিল সম্ভবত নীলনদপাড়ের দেশ মিসর ও সুদানে। হাজার হাজার বছর আগে যারা পিরামিড তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেছিল। প্রাচীন মিসরীয়দের প্রযুক্তিগত যোগ্যতা ছিল ঈর্ষা করার মতো। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের গল্পটা শুধুই আমেরিকাকে উপনিবেশ বানানোর। সে দেশের সহজসরল বাসিন্দাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন-নিপীড়ন ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দশকের আগে আমেরিকা বিশ্ববাসীর কাছে অজানা থাকলেও গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, কলম্বাসের আবিষ্কারের ৩০ হাজার বছর আগেও ছিল ওই মহাদেশের অস্তিত্ব। ওই মহাদেশের বিভিন্ন অংশে সে সময়ও ছিল সমাজবদ্ধ মানুষের বসবাস। গ্লাসিয়াল যুগের আগেও উত্তর আমেরিকায় মানুষের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায়। ১৯ থেকে ২৬ হাজার বছর আগে আমেরিকায় জনবসতি থাকলেও ধারণা করা হয়, সংখ্যায় তারা ছিল কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২৯ থেকে ৫৭ হাজার বছর আগে হিমবাহ গলে আমেরিকা ডুবে যায়। যে কারণে দুনিয়ার অন্যান্য এলাকার তুলনায় আমেরিকায় মানববসতি ছিল বিরল।
ইতিহাস ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে আমেরিকা আবিষ্কারের নায়ক হিসেবে জানলেও আসলে তিনি ছিলেন একজন খলনায়ক। ১৪৫১ সালে ইতালির জেনোয়া শহরে এক তাঁতির ঘরে কলম্বাসের জন্ম। ছোটবেলা থেকেই সাগরের নীল জল তাঁকে আকর্ষণ করত। যুবক বয়সেই তিনি সমুদ্রযাত্রার পরিকল্পনা আঁটেন। ১৪৭৭ সালে সমুদ্র অভিযানের স্বপ্নপূরণে কলম্বাস পর্তুগালের লিসবনে যান। পর্তুগাল ছিল সে সময় সাগর অভিযানের ক্ষেত্রে অগ্রসর দেশ।
সেখান থেকে তিনি ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক বন্দরগুলোতে নৌ অভিযান পরিচালনা করেন। ১৪৮৩ সালে পর্তুগালের রাজা জন দ্বিতীয়র কাছে কলম্বাস তাঁর পরিকল্পনা জমা দেন। তাতে ছিল আটলান্টিক হয়ে পশ্চিমের দিকে ভারতবর্ষ বা ইন্ডিজে যাওয়ার স্বপ্নকল্প। সেই মধ্যযুগে ইউরোপে এশিয়া মহাদেশের পুরোটাকেই ইন্ডিজ বলে অভিহিত করা হতো।
পর্তুগালের রাজা যখন কলম্বাসের পরিকল্পনায় রাজি হলেন না, তখন তিনি স্পেনের রাজা ও রানির শরণাপন্ন হন। স্পেনের রাজদরবারে তাঁর অভিযান অনুমোদন করা হয়। স্পেনের রাজা ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জের ভাইসরয় হিসেবে কলম্বাসকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ তাঁর জন্য ছিল এক বিরাট সম্মান, একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। ভারতবর্ষ তথা ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করতে পারলেই কেবল কলম্বাসের ভাইসরয় পদটি মর্যাদাবান হয়ে উঠবে। ব্যর্থ হলে বিশাল খরচের জন্য জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে। কলম্বাস হারার পাত্র ছিলেন না। ১৪৯১ সালে আটলান্টিক অভিযানে কলম্বাস ব্যবহার করেন এক ‘রহস্যময়’ মানচিত্র। এটি ছিল তাঁর কাছে আলোর দিশা। কলম্বাস মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন এই মানচিত্রটি তাঁকে স্বপ্নের দেশ ভারতবর্ষে যাওয়ার পথ দেখাবে। ধনসম্পদে ভরা সে দেশ স্পেনের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। কলম্বাসের স্বপ্নের সেই মানচিত্রটি ছিল জার্মান মানচিত্রকর হেনেরিকাস মারটেলাসের তৈরি। আরও কিছু গুণীজন এই মানচিত্র তৈরিতে অবদান রেখেছেন। বহু পুরোনো মানচিত্রটি সময়ের ব্যবধানে অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ভারতবর্ষে যাওয়ার নতুন পথ আবিষ্কার করতে গিয়ে কলম্বাস আমেরিকায় পা রাখেন। বাহামাস কিউবাসহ অন্তত ১০টি এলাকার বাসিন্দা দাবি করেন, কলম্বাস তাদের এলাকাতেই প্রথম পদার্পণ করেন। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। কলম্বাসের কাছে ভারতবর্ষ ছিল এক অচেনা দেশ। আমেরিকার বিষয়েও তিনি ছিলেন অজ্ঞ। জাহাজ থেকে আমেরিকায় নামার পর কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি ভারতের বুকে পা রেখেছেন। বেজায় খুশিও যে হয়েছিলেন তা সহজেই অনুমেয়। কলম্বাসের জন্য হতাশার বিষয় হলো, তিনি ভারতের দিশা পাননি কোনো দিনও। যে মহাদেশটি তিনি আবিষ্কার করেন, সেটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী মহাদেশ। এ মহাদেশের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান দেশ। এ নিয়ে তাদের গর্বেরও শেষ নেই। অথচ ভারতবর্ষের বদলে সম্পদহীন ভূখণ্ড আবিষ্কারের জন্য কলম্বাসকে ভর্ৎসনা শুধু নয়, শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছিল। অনেকের মতে, ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জাহাজ প্রথম নোঙর করে বাহামাস দ্বীপে। দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর। কলম্বাসের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র অভিযাত্রী তিনটি জাহাজে চড়ে আমেরিকার বাহামাস দ্বীপে পৌঁছান। নিজেদের দেশে বিদেশি অতিথিদের আগমনে খুশি হয়েছিল দ্বীপটির আদিবাসীরা। তারা তাদের দেশে আগত স্পেনীয় অভিযাত্রীদের অতিথি হিসেবে স্বাগত জানান। কলম্বাসের একটি জাহাজ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমেরিকার আদিবাসীরা নবাগত অতিথিদের ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি মেরামত করে দেয় বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে।
অভ্যর্থনা জানাতে আসা আদিবাসীদের দেহে সোনার অলংকার দেখে কলম্বাসের লোভ জাগে। তিনি অনুমান করেন, আশপাশের কোথাও সোনার খনি রয়েছে। আদিবাসীদের সরলতাকে কলম্বাস নিজেদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ভাবেন। চতুর কলম্বাস মুহূর্তেই কষে নেন অঙ্ক। তিনি আশাবাদী হয়ে ওঠেন, খুব কম পরিশ্রমেই ওই ভূখণ্ডের সবকিছু নিজের দখলে নিতে পারবেন। নতুন আবিষ্কৃত ভূখণ্ডের আদিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনাও পাকাপোক্ত করেন মনে মনে। এ উদ্দেশ্য পূরণে স্পেনে গিয়ে আরও ১ হাজার ২০০ লোককে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তারপর শুরু হয় পৈশাচিক নির্মমতা। চলে নিষ্ঠুর গণহত্যা। কলম্বাস ১৪ বছরের ওপরের সব আদিবাসীকে তিন মাস পরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা রাজকোষে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বলা হয়, এই নির্দেশ মানতে যারা ব্যর্থ হবে, তাদেরই দুই হাত কেটে ফেলা হবে। যার অর্থ ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যু। অনেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে আরও ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েছে। হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে আরও কঠিন মৃত্যু নিশ্চিত করা হতো তাদের জন্য। অনেক আদিবাসীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
হিস্পানিওলা দ্বীপের আরাওয়াক গোত্রের ৫০ হাজার আদিবাসী কলম্বাস বাহিনীর নির্মমতা সইতে না পেরে গণ-আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
মায়েরা তাঁদের শিশুদের বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতেন। যাতে কলম্বাসের লোকেরা কুকুরের খাদ্য হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করতে না পারে।
আমেরিকার পিতৃপুরুষ কলম্বাস ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা আদিবাসীদের ওপর যে নৃশংসতা দেখিয়েছে তার কোনো তুলনা খুঁজে পাওয়া ভার। স্পেনের ঐতিহাসিক বার্তোলমে দা লাস কাসাস তাঁর ‘হিস্টোরি অব দ্য ইন্ডিজ’ বইয়ে যতটুকু সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তা ভিরমি খাওয়ার মতো। ওই ইতিহাসবিদের ভাষ্য, ‘কলম্বাস বাহিনী তাদের ছুরি ও তলোয়ারের ধার পরীক্ষা করার জন্যও আদিবাসীদের টুকরো টুকরো করে কাটত।’ এমনকি কখনো কখনো শিশুদের শির-েদ করার উৎসবেও মেতে উঠত তারা। কলম্বাসের লেখা চিঠিতে আদিবাসীদের গণহত্যা ও তাদের ওপর নির্যাতনের যে চিত্র রয়েছে, তা অসভ্য মানসিকতার প্রতিফলন বললেও ভুল হবে না। বলা যায়, বিশ্বজুড়ে আমেরিকানরা যা ইচ্ছা তাই করার যে মানসিকতায় ভুগছে, তা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া উত্তরাধিকার।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : [email protected]