বসুন্ধরা শুভসংঘ টাঙ্গাইল জেলা শাখার উদ্যোগে মাদকসেবিদের কাউন্সিলিং ও মাদকের ভয়াবহতা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বাগানবাড়ি পানির ট্যাংকি বাজারে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বসুন্ধরা শুভসংঘ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সহসভাপতি মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগানবাড়ি সমাজপতি আলহাজ্ব আতোয়ার রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেবুব ইসলাম রুমন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত রহমান, কোষাধক্ষ আল আমিন ও প্রচার সম্পাদক সুজন মিয়া প্রমুখ। এছাড়াও ২৫ জন মাদকসেবি অংশগ্রহন করেন। মাদকসেবিরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এবং বসুন্ধরা শুভসংঘের সঠিক পথে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, মাদক মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে, হৃৎপিণ্ড, যকৃত ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ক্যানসার এবং এইচআইভি/এইডসের মতো মরণব্যাধি হতে পারে। মাদকাসক্তি বিষণ্নতা, উদ্বেগ, মতিভ্রম এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো গুরুতর মানসিক রোগের কারণ। আসক্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং বাস্তবতাবোধ হারায়।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি সমাজে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়, কলহ বাড়ে এবং সম্পর্কগুলো ভেঙে যায়। অনেক সময় আসক্ত ব্যক্তি অর্থ সংগ্রহের জন্য চুরি, ডাকাতি বা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়ায়।
মাদকাসক্তি ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি করে। মাদকের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, যা পরিবারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। চিকিৎসার জন্যও অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়।
তাই কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মাদকাসক্তির মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘ কাজ করছি। হতাশা, একাকীত্ব, মানসিক চাপ বা অন্য কোনো ট্রমা মাদকাসক্তির কারণ হতে পারে। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা পরিবর্তন: আসক্ত ব্যক্তিকে তার নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করা হয়। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নতুন কৌশল শেখানো হয়।
পরিবারের সদস্যদেরও কাউন্সিলিং করা হয়, যাতে তারা আসক্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং তাকে সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন। পরিবারের সমর্থন ছাড়া এই পথ অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে আসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এখানে তাদের জন্য বিভিন্ন থেরাপি, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে।
আসক্ত ব্যক্তিকে মাদক পরিহারের জন্য বাস্তবসম্মত কৌশল শেখানো হয়, যাতে সে মাদকের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলেও তা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে।ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মাদকের কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
সুস্থ সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং গঠনমূলক কাজে তরুণদের উৎসাহিত করতে হবে।
আপনার আশেপাশে যদি কেউ মাদকাসক্ত হন, তাকে ঘৃণা না করে সহযোগিতার হাত বাড়ান। তাকে কাউন্সিলিং ও চিকিৎসার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
তরুণদের আত্মবিশ্বাসী হতে শেখান, যাতে তারা মাদকের প্রলোভন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। সঠিক কাউন্সিলিং ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মনে রাখবেন, "মাদককে না বলুন, জীবনকে হ্যাঁ বলুন।