খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল। একটি ব্যস্ত মহাসড়ক। আর এই সড়কে যেতে পার হতে হয় অন্তত ১৬০টি রেলগেট। যার মধ্যে আবার ৬৭টির কোনো অনুমোদন দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তার ওপর ৯৩টি বৈধ লেভেলক্রসিংয়ে ৪৬টিতে কোনো গেটম্যান নেই। রেললাইনের ৬৯টি স্থানে রাস্তা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়েই মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। ফলে বিপজ্জনক অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। পাকসি রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খুলনায় রেল দুর্ঘটনায় বছরে ৪০-৪৫ জনের মৃত্যু হয়। গত এক বছরে খুলনা জেলায় এই সংখ্যা ১০৭। এর মধ্যে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বৈধ গেটেও অনেক সময় গেটম্যান, সংকেতবাতি ও ঘণ্টা থাকে না। অবৈধ ক্রসিংয়ে সচেতনতা সাইন বোর্ড দিয়েই দায় এড়ানোর চেষ্টা করে সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, সর্বশেষ ১৪ জুলাই রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেন খুলনায় আসার পথে আফিল গেট লেভেলক্রসিংয়ে একটি ট্রাকের কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে। খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, মালবাহী ট্রাক রেললাইনের ওপর উঠেই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেনটি থেমে থাকা ট্রাকটিকে ধাক্কা দিয়ে কিছুদূর নিয়ে যায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে। এতে ট্রেনযাত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম খান নিহত ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। এর আগে ৬ মে রাতে খুলনা নিউমার্কেট এলাকার ১০ তলা বিল্ডিংয়ের পেছনে রেলে কাটা পড়ে এক যুবক নিহত হয়। এ স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে অবৈধ যাতায়াতের পথ রয়েছে।
স্থানীয়রা চলাচলের অনেক সময় লেভেলক্রসিং তৈরি করে। রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তা অরক্ষিত থাকে
- ফরিদ আহমেদ , মহাব্যবস্থাপক, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে
এ ছাড়া ২০২৩ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল পাশা প্রাইভেটকারযোগে ফুলতলা মিলিটারি স্কুলে যাচ্ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পথেরবাজার লেভেলক্রসিংয়ে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস প্রাইভেটকারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকারের চালকসহ তিন যাত্রী গুরুতর আহত হন। লেভেলক্রসিংয়ে স্থাপনা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে পরিদর্শক (আইডব্লিউ পূর্ত) তৌহিদ সুমন জানান, মোট ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে লেভেলক্রসিংগুলো পরিচালনা করা হয়। এ ক্যাটাগরি ও বিশেষ ক্যাটাগরিতে থাকা লেভেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিশ্চিত করা হয়। বাকি তিন ক্যাটাগরিতে অবস্থা বিবেচনায় গেটম্যান থাকে। অনেক সময় স্থানীয় মানুষ নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে রেললাইনের ওপর দিয়ে যাতায়াতের অনুমোদনহীন পথ তৈরি করেছে। অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নিউমার্কেট ১০ তলা ভবন এলাকায় রেললাইনের পাশে দেওয়াল দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করা হয়। কিন্তু মানুষ সে দেওয়ায় ভেঙে সেখান থেকে চলাচল করছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ জানান, স্থানীয় মানুষ, সড়ক বিভাগ, পৌরসভাসহ নানা প্রতিষ্ঠান চলাচলের সুবিধার জন্য অনেক সময় লেভেলক্রসিং তৈরি করে। কিন্তু রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তা অরক্ষিত থাকে।