দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে প্রায় শত চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জেতার কৃতিত্ব রয়েছে ঢাকা মোহামেডানের। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯ বার লিগ জেতার রেকর্ড। অথচ ঐতিহ্যবাহী এ দলের কাছে পেশাদার ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল। ২০০৭-২০০৮ মৌসুমে বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবলের যাত্রা। ঢাকা আবাহনী সর্বোচ্চ ৬, অভিষেক আসর থেকে বসুন্ধরা কিংস টানা ৫, শেখ জামাল ধানমন্ডি ৩ ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ১ বার শিরোপা জেতে। পনেরো লিগে চ্যাম্পিয়ন না হওয়াটা ছিল মোহামেডানের চরম ব্যর্থতা। সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ছিল চারবার রানার্সআপ। এ তো ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালোদের কাছে ছিল রেলিগেটেটের চেয়েও লজ্জার। যে দল টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন না হওয়ার কারণে সমর্থকরা ক্লাব জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। সেই মোহামেডানই কি না টানা ১৫ লিগে শিরোপার বাইরে ছিল একি ভাবা যায়!
শিরোপা কখনো মোহামেডানের কাছে স্বপ্নে পরিণত হবে তা তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ৩০ বছর পর শিরোপা ফিরে পেয়েছিল ঐতিহ্যবাহী লিভারপুল। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিও ২৩ বছর ধরে লিগ জিততে পারছিল না।
ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে ২০০২ সালের পর লিগের হারানো গৌরব উদ্ধার করেছে মোহামেডান। আর তা পেশাদার লিগে নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়ে। গত শনিবার ঢাকা আবাহনী হেরে যায় ফর্টিস এফসির কাছে। আর এতেই প্রথমবার পেশাদার লিগে শিরোপা নিশ্চিত হয় ঢাকা মোহামেডানের। পুলিশকে হারিয়ে সাদা-কালোদের অ্যাকউন্টে জমা পড়ে ৩৮ পয়েন্ট। অন্যদের তা স্পর্শ করা সম্ভব নয় বলেই তিন ম্যাচ আগে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়।
সমর্থকরা অপেক্ষায় ছিলেন স্বপ্নের ট্রফি কখন হাতে উঠবে প্রিয় মোহামেডানের। আজই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটছে। কুমিল্লা ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে লড়বে। ম্যাচ শেষেই বিশেষ মঞ্চেই চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলে দেওয়া হবে অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতের হাতে। সাধারণত লিগের শেষ ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেওয়া হয়। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটছে। ২৯ মে গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে মোহামেডানের শেষ ম্যাচ ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের বিপক্ষে। কিন্তু এক ম্যাচ আগেই ট্রফি পাচ্ছে সাদা-কালোরা। বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান ট্রফি তুলে দিতে পারেন।
এদিকে আজ প্রায় দুই যুগ ফুটবল ক্যারিয়ারের অবসর টানছেন গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। তিনি মোহামেডানের বিপক্ষে ব্রাদার্সের হয়ে জীবনের শেষ ম্যাচ খেলবেন। জাতীয় দল ও ঘরোয়া আসরে বিভিন্ন ক্লাবে রানা আস্থার সঙ্গে খেলেছেন। তরুণদের জায়গা করে দিতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন।
বড় ভূমিকা রেখেছেন। মোহামেডান টিম ম্যানেজমেন্ট লিগ কমিটির সভাপতির কাছে অনুরোধ রেখেছিল তাদের হোম ভেন্যু কুমিল্লাতেই শিরোপার ট্রফি দেওয়ার জন্য। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের প্রতি সম্মান দেখিয়েই সেই অনুরোধ রেখেছেন ইমরুল হাসান। তিনিই আজ ট্রফি তুলে দিতে পারেন দিয়াবাতের হাতে। ঘরের মাঠে ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে সাদা-কালোর দল।