শ্রীলঙ্কার কফিনে শুরুর মতো শেষ পেরেকটাও ঠুকেন ডান হাতি পেসার তানজিম সাকিব। শুধু বল হাতে নয়, দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও জ্বলে উঠেছিলেন তানজিম। তারপরও কলম্বোর রানা প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে হারানোর নায়ক বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেললেন ২৮ বছর বয়সি বাঁহাতি স্পিনার। খেলতে নেমেই ইতিহাসের পাতায় ব্র্যাকেটবন্দি হলেন। তার ঘূর্ণির মায়াজালে ১৬ রানে জয় তুলে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে সমতা এনেছে বাংলাদেশ। তানভিরের ম্যাচ জেতানো স্পেল ১০-১-৩৯-৫। যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। আগের সেরা পারফরম্যান্স আরেক বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক রাজের (৫/৬২)।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ৮ জুলাই, পাল্লেকেলেতে। ম্যাচটি আবার সিরিজ নির্ধারণী। সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ৭৭ রানে। প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে বাংলাদেশের এটাই প্রথম জয়। ২০২৩ সালে এশিয়া কাপে এখানে ভারতকে হারানোর রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। সব মিলিয়ে প্রেমাদাসায় বাংলাদেশের রেকর্ড ১৫ ম্যাচে ২ জয়। সিরিজে সমতা এনে উচ্ছ্বসিত টাইগার অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ, ‘এই উইকেটে ২৪৮ রান টপকে যাওয়া কঠিন। আমরা আশাবাদী ছিলাম এই রান আটকে দিতে। তানভিরকে ইতিবাচক মানসিকতায় বোলিং করতে বলেছিলাম। প্রথম ম্যাচে হারের পর এভাবে সিরিজে ফেরা কঠিন।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে গতকাল ছিল সাফল্যগাথা স্মরণীয় এক দিন। চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেয়েছে। যা আগে কোনো দিন হয়নি। ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ১৬ রানে। নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে, অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে ছেলেরা ১৩-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে এবং নারী হকি দলও ৩-০ গোলে হারায় উজবেকিস্তানকে।
মিরাজ বাহিনী প্রথম ওয়ানডে হেরেছিল চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে। ২৪৫ রানের টার্গেটে ২৭ বলে মাত্র ৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। গতকালের ওয়ানডে ছিল সিরিজে সমতা ফেরানোর। জয়ের তাড়নায় মিরাজ বাহিনী খেলতে নামে একাদশে দুই পরিবর্তন নিয়ে। ছন্দ হারানো টি-২০ অধিনায়ক লিটন দাসকে সাজঘরে বসিয়ে রাখা হয়। লিটন সর্বশেষ আট ম্যাচের দুই অংকের রান করতে পারেননি। সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পুনেতে। তার পরিবর্তে খেলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট শিকারি তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হয় হাসান মাহমুদকে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও মিডল অর্ডার তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ রান করে মিরাজ বাহিনী। পারভেজ ইমন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ৬৯ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায়। হৃদয় খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। ম্যাচটি আবার হৃদয়ের জন্য স্পেশাল। হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের ২৫তম ক্রিকেটার হিসেবে হাজার রানের ক্লাবে নাম লেখান হৃদয়। মাইলফলকটি গড়েন ৩৭ ম্যাচের ৩৩তম ইনিংসে। তার চেয়ে কম ২৯ ইনিংসে হাজার রানের ক্লাবে নাম লিখেছিলেন শাহরিয়ার নাফিস ও এনামুল হক বিজয়। ২৪৯ রানের টার্গেটে ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিকদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন লিয়ানাগে।
তানভিরের ম্যাচসেরা বোলিংয়ের দিন ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙেছেন টাইগার অধিনায়ক। টানা পাঁচ ম্যাচে উইকেটশূন্য মিরাজ গতকাল উইকেটের দেখা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী
বাংলাদেশ : ২৪৮/১০, ৪৫.৫ ওভার (পারভেজ ইমন ৬৭, নাজমুল শান্ত ১৪, তাওহিদ হৃদয় ৫১, তানজিম সাকিব ৩৩*, জাকের আলি২৪, শামীম পাটোয়ারী ২২। আসিথা ৯-০-৩৫-৪, চামিরা ৭-০-৩৭-১, আসালাঙ্কা ৩-০-২৪-১, হাসারাঙ্গা ৯.৫-১-৬০-৩)
শ্রীলঙ্কা : ২৩২/১০, ৪৮.৫ ওভার ( লিয়ানাগে ৭৮, মাদুশকা ১৭, কুসাল ৫৬, কামিন্দু ৩৩, হাসারাঙ্গা ১৩, চামিরা ১৩*। তানজিম ৪.৫-০-৩৪-২, তানভির ১০-২-৩৯-৫, মুস্তাফিজ ৮-০-৫৬-১, মিরাজ ১০-০-৩৭-১, শামীম ৯-১-২২-১)