মিয়ানমারকে হারিয়ে আগেই এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ‘সি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচটি তাই আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছিল। তবে আফঈদা খন্দকাররা দুর্বল তুর্কমেনিস্তানকে সমীহ করেই মাঠে নামে। ড্র করলেও অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতো। মেয়েদের টার্গেট ছিল টানা তিন ম্যাচ জিতে মিশন শেষ করতে। সফলও হয়েছে ঋতুপর্ণারা। ৭-০ গোলে পরাজিত করেছে তুর্কমেনিস্তানকে। এমন হারের পরও তুর্কমেনিস্তানের মেয়েরা স্বস্তি নিয়ে ছেড়েছে বলা যায়। কেননা প্রথমার্ধে ৭ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়বে। তা আর হয়নি। বিজয়ী দলের শামসুন্নাহার ও ঋতুপর্ণা দুটি এবং স্বপ্না, মনিকা ও তহুরা একটি করে গোল করেন। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়াতে আফঈদারা চূড়ান্ত পর্ব খেলবে বাছাই পর্বে অপরাজিত দল হিসেবে। এক সময়ে ভারতীয় মেয়েদের কাছে সাফ জেতাটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেই বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সাফ ডিঙিয়ে বাংলাদেশ এখন এশিয়া কাপে। এমনকি ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ খেলার হাতছানি দিচ্ছে তাদের। এশিয়া থেকে আট দেশ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। একের পর এক যেভাবে মেয়েরা ইতিহাস গড়ছে এখন তাদের কাছে সব ভয়কেই জয় করা সম্ভব।
এশিয়ান কাপে কেমন খেলবে তার ওপরই নির্ভর করছে মেয়েদের বিশ্বকাপ খেলাটা। অবাক করা যায়, যে মেয়েরা ঠিকমতো ফুটবলে লাথি মারতে পারবে কি না সংশয় ছিল। কত বাধা কত প্রতিকূলতা, অথচ এর মধ্যে বাংলার মেয়েরা জাতিকে কি না বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। অনেকে তো ভেবেছিলেন মিয়ানমারে বাছাই পর্বও পেরোতে পারবে না বাংলাদেশ। মিয়ানমারই অনায়াসে এশিয়ান কাপ খেলবে। এটি ভাবার যৌক্তিকতাও ছিল, মিয়ানমার তো বটেই, র্যাঙ্কিংয়ে বাহরাইনও এগিয়ে ছিল। সত্যি বলতে কি, প্রথম ম্যাচ জিতবে কি না তা নিয়েও সংশয় ছিল। এখন টানা তিন ম্যাচ জিতেই স্বপ্নের এশিয়ান কাপে। হামজাদের মতো তারকারা খেলার পরও বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দল এশিয়ান কাপে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের ঘিরে ঢাকঢোল, কতই না উন্মাদনা। অথচ হামজাদের আগেই নীরব বিপ্লব ঘটালেন আফঈদারা।
অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে মেয়েরা। শুধু প্রশংসা নয় আফঈদারা স্যালুট পাবার যোগ্যতা রাখে। হেড কোচ পিটার বাটলার দেখিয়েছেন তার ক্যারিশম্যা। যেভাবে তিনি অপমানের শিকার হয়েছিলেন। তাতে মনে হচ্ছিল তার বিদায়ঘণ্টা বেজেই যাচ্ছে। সব সহ্য করে নতুন উদ্যোগে দল সাজিয়েছেন। যারা নিজেদের অপরিহার্য মনে করতেন। তারা ছাড়া দল যে চলে তার প্রমাণ ভালোভাবে দিয়েছেন পিটার। সাফের পর মেয়েরা এশিয়া কাপ খেলবে। এরপর গন্তব্য কোথায় তা সময়ই বলে দেবে।
বাহরাইন, মিয়ানমার, তুর্কমেনিস্তান তিন দেশকে হারানো মানে হ্যাটট্রিক জয়। একশতে ১০০ মার্কস একে তো সাফল্যের ষোলআনা পূর্ণ বলা যায়। মেয়েরা তো বলছে, এখানেই তারা থেমে থাকতে চায় না। আরও বড় পথ পাড়ি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু বাফুফে কি প্রস্তুত? এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে সাফল্য পাওয়ার পর বাফুফে মেয়েদের আজ সংবর্ধনা জানাবে। হাতিরঝিল-সংলগ্ন এম্ফিথিয়েটারে খেলোয়াড়দের আনা হবে বিমানবন্দর থেকে।