প্রকৃতি, ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতার যেন এক অপূর্ব মেলবন্ধন নেপালের চন্দ্রগিরি পাহাড়। কাঠমান্ডু উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এ ঐতিহাসিক স্থানটি থেকে হিমালয়সহ বিস্তৃত পর্বতমালার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মেলে। পথে বাড়তি পাওয়া আধুনিক ক্যাবল কার ভ্রমণ। যা পর্যটকদের দেয় ‘ভয়ংকর’ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এটি নেপালের এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তাই প্রতিদিন তা উপভোগ করতে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। অগ্রগামী ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস-এর স্বত্বাধিকারী গোলাম ফারুক মজনু বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং মার্চ থেকে মে চন্দ্রগিরি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে শীতকালে এখানে মাঝে মাঝে তুষারপাতও হয়, যা পর্যটকদের জন্য এক বাড়তি আকর্ষণ।’
নেপালের প্রকৃতি, ইতিহাস এবং আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন বলা হয় চন্দ্রগিরি পাহাড়কে। রাজধানী কাঠমান্ডু উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত চন্দ্রগিরি পাহাড় একাধারে একটি ঐতিহাসিক স্থান, গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় তীর্থ এবং নেপালের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৩৭০ ফুট উচ্চতা এ পাহাড়ের। এখান থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকার এবং অন্নপূর্ণা থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালার এক মনোরম প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়। এ পাহাড় নেপালের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। নেপালে প্রবাদ আছে, গোর্খার রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহ এ পাহাড়ের চূড়া থেকেই প্রথম কাঠমান্ডু উপত্যকার সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি দেখেন। পরে তা জয় করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। পৃথ্বী নারায়ণ শাহ এখানে অবস্থিত ভালেশ্বর মহাদেব মন্দিরে পূজা দিয়েছিলেন। তাঁর মনোস্কামনা পূর্ণ হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের স্মরণে পাহাড়ের চূড়ায় পৃথ্বী নারায়ণ শাহের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। চন্দ্রগিরি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ভালেশ্বর মহাদেব মন্দির হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান। চন্দ্রগিরি পাহাড়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ‘ক্যাবল কার’। থানকোট থেকে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত প্রায় ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ যাত্রাপথে চারপাশের সবুজ অরণ্য এবং উপত্যকার অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে পাহাড়ের চূড়া থেকে অন্নপূর্ণা, মনেশলু, লাংটাং, গণেশ হিমাল থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত দেখা যায়। এ ছাড়াও পুরো কাঠমান্ডু উপত্যকার ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য এখান থেকে উপভোগ করা যায়। যারা হাইকিং ভালোবাসেন, তাদের জন্যও চন্দ্রগিরি একটি আদর্শ স্থান।