আজ পবিত্র আশুরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো হিজরি সনের ১০ মহররম বাংলাদেশেও পালিত হয়। আজকের দিনটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। এ দিনেই কারবালার প্রান্তরে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন (রা.)। কারবালা ট্র্যাজেডির কারণে মুসলিম বিশ্বে আশুরা পালিত হয় শোক ও হোসাইনি চেতনায়। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি পালনে নানান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আগে-পরে মিলিয়ে এ উপলক্ষে দুই দিন রোজা পালনসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন। আশুরা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘পবিত্র আশুরার শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগাবে।’ বাণীতে রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আশুরা উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ মসজিদ, মাদরাসা, খানকা শরিফে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছে। শিয়া সম্প্রদায় আজ সকালে রাজধানীর হোসনি দালান, পল্টন ও মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। এজন্য পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। আজ সরকারি ছুটি।
ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখতে কারবালা প্রান্তরে শিশুসন্তান, ভাই, পরিজন, নবীজির সাহাবিসহ ৭২ জন নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন আল্লাহর প্রিয় নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন (রা.)। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম ধর্মদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক এজিদ বাহিনীর হাতে তাঁরা শহীদ হন। বর্তমান ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে ১০ দিন ধরে অবরোধ করে রাখার পর নির্মমভাবে শহীদ করে এজিদ বাহিনী। এর আগে তারা এজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য একের পর এক হত্যাকা ঘটিয়ে ইমাম হোসাইনকে চাপ দেয়। কিন্তু বেনামাজি, মদ্যপ ও ব্যভিচারী এজিদকে ইসলামের খলিফা মেনে বাইয়াত গ্রহণ করতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। আর এভাবেই ইমাম হোসাইন (রা.) মুসলিম জাতির সামনে জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইসলামের সুমহান আদর্শের পতাকা সমুন্নত রাখার দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে যান। সেই থেকে পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জুগিয়ে আসছে। বিশ্বের ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধর্মীয় ঘটনার কারণে আসমানি কিতাব অনুসারীদের কাছেও আশুরার দিনটি বিশেষভাবে মহিমান্বিত। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, এ দিনেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং একই দিনে কেয়ামত বা পৃথিবী ধ্বংস হবে। এ দিনেই মানবজাতির আদিপিতা হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন। এ দিনেই হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের নিপীড়ন থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং অত্যাচারী ফেরাউনের সদলবলে নীলনদে সলিলসমাধি ঘটে। এ দিনেই হজরত ইসা (আ.)-এর অন্তর্ধান বা চতুর্থ আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়। দিনটি উপলক্ষে রেডিও, টিভি বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকসমূহ বিশেষ সম্পাদকীয় ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।