জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত থেকে অবশেষে পিছু হটল সরকার। তাই এ-সংক্রান্ত জারি করা অধ্যাদেশ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আগের মতোই চলবে এনবিআরের কার্যক্রম। গতকাল অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, অধ্যাদেশটি সংশোধন না করা পর্যন্ত এনবিআরের সব কার্যক্রম আগের মতো চলবে। কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। জানা গেছে, আন্দোলনের মুখে এনবিআর বিভক্তি নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশ কার্যকর করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এর অংশ হিসেবে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা না পর্যন্ত এনবিআরের সব কার্যক্রম আগের মতো চলবে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এতে বলা হয়, অধ্যাদেশ সংশোধন করা যেহেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই এটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর ও তার কর্মকর্তারা আগের মতোই পরিচালিত হবে। এ দিন রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুজন সম্মানিত সদস্যের মধ্যস্থতায় দিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার এক পর্যায়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই অধ্যাদেশ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এনবিআরের কার্যক্রম আগের নিয়মে সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যদের পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। বরং সংস্কার কাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
এতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থ বছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং সম্মানিত করদাতাগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করার জন্য অনুরোধ করা হলো’। অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ- দুটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করে পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হবে, যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়।
তা ছাড়া দুটি নতুন বিভাগের জন্য ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসব আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। এ কাজগুলোও সময়সাপেক্ষ কাজ। যেহেতু এ কাজগুলো সম্পাদন না করে, কোনোভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে।