২০১৭ সালের এক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি মারুফ হোসেন পায়ের পাঁচটি আঙুল হারিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা দায়ের করলে আট বছর পর তিনি রায় পেয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কস কাউন্টির সিভিল কোর্টের জুরিবোর্ড গত ২ জুলাই দেওয়া রায়ে মারুফ হোসেনকে পাঁচ আঙুলের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২২.৭৫ মিলিয়ন ডলার (২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা) দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রায়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুনে মারুফের বয়স যখন ২৪ বছর ছিল তখন তিনি ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিলেন। ভাঙা জরাজীর্ণ প্ল্যাটফর্মে পা পিছলে রেললাইনের ওপর পড়ে ছিলেন। সে সময়েই একটি ট্রেন মারুফের বাম পায়ের পাঁচটি আঙুলের ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে কেটে যায় সবকটি আঙুল। একই কারণে মারুফ তার নিতম্বেও আঘাত পান। থেঁতলে যায় মেরুদণ্ড। অর্থাৎ প্রাণে বেঁচে গেলেও স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় বাকিটা জীবন তাকে কাটাতে হচ্ছে সার্বক্ষণিক চিকিৎসার সঙ্গে। মা-বাবার সঙ্গে অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর জীবন শুরু করেছিলেন সাইকেলে ডেলিভারিম্যানের কাজ দিয়ে। কিন্তু এমটিএর (মেট্রোপলিটন ট্রানজিট অথরিটি) গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারুফের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায়। ব্রঙ্কসের জ্যাকবি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার প্রথম ছয় মাস পরই মারুফ একটি ল’ ফার্মের মাধ্যমে এমটিএর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবিতে মামলা করেন। সে সময় তিনি ২০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন।
এমটিএ তাকে মাত্র ১ লাখ ডলারের বিনিময়ে মামলাটির নিষ্পত্তির অনুরোধ জানায়। এমটিএ তখন গল্প সাজিয়েছিল যে, মারুফ দুর্ঘটনায় পতিত হননি। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এমটিএ সাজানো গল্পে উল্লেখ করেছিল যে, মারুফ আত্মহত্যার উদ্দেশে ট্রেনের লাইনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। এ দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য এমটিএ দুজন সাক্ষীও সংগ্রহ করেছিল। এমন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মারুফকে ভয়ভীতিও প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু মারুফের আইনজীবী দুর্ঘটনাস্থলের জরাজীর্ণ অবস্থা এবং হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর থেকে প্রথম কয়েকদিনে তার কথাবার্তা ও আচরণ গভীরভাবে বিশ্লেষণের মধ্যদিয়ে মাননীয় আদালতকে কনভিন্স করতে সক্ষম হন যে, মারুফ মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন এবং আত্মহত্যা করতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। শুধু তাই নয়, সেটি ছিল রমজান মাস এবং মারুফ রোজা ছিলেন। মারুফের মানসিক চিকিৎসক নাবিল করোম এমন তথ্য পেশ করেন ১২ সদস্যের জুরিবোর্ডের সামনে।
জুরিবোর্ডের প্রদত্ত রায়ের পর মারুফ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, এমটিএ আমাকে ভুল প্রমাণিত করতে চেয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য জয়ী হলো। মারুফের আইনজীবী নিক লিয়াকাস বলেন, এই রায় কেবল তার মক্কেল মারুফের জন্য বিজয় নয়, বরং এমটিএর মতো বৃহৎ করপোরেশনগুলো অপরাধ থেকে নিজেদের কৌশলে মুক্ত রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে।