মৌসুম আসতেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক রোগী। এর মধ্যেই ডেঙ্গুর থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৭৫০ জন। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হতেই আক্রান্ত বাড়তে শুরু করেছে। এখন থেকে প্রতিদিনই রোগী বাড়বে। এডিস মশার ঘনত্ব বেশি থাকায় এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে মশক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, গাজীপুর জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব গত বছরের তুলনায় বেশি। এ জায়গাগুলোয় বর্তমানে রোগী ভর্তিও বেশি হচ্ছে। কোথাও যদি এডিস মশার ঘনত্ব বেশি হয় এবং আক্রান্ত রোগীও থাকে তাহলে সেখানে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।’ কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মূলত এডিস এজিপ্ট এবং এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির মশা। এগুলো সাধারণত দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় মানুষকে কামড়ায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাতের বেলায়ও কামড়ায়। এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র, ফ্রিজের ট্রে, এসির পানি জমানো স্থানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ছোট শহরে বেশি জনসংখ্যার কারণে প্রচুর পরিমাণে ছোটবড় পাত্র তৈরি হয়, যার মধ্যে পানি জমা হয়ে মশার বংশবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করছে। প্লাস্টিকের বেশি ব্যবহারের ফলে তৈরি হচ্ছে নানান ধরনের প্লাস্টিকের পাত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বোতল, কাপ, ব্যাগ। এগুলোতে পানি জমে ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। এসব পাত্রে বৃষ্টি হলেই কমবেশি পানি জমা হয়ে এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত জায়গা তৈরি করে। দেশের গ্রাম থেকে শহরে প্রায় সব জায়গায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা এবং নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে; যা মশার বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরে উঁচু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো-বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ২০০০ সালে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয় এবং মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। বর্তমানে ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই, বরং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং ৫৭৫ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন আর শুধু শহরের রোগ নয়, সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে সাধারণত এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা খুব জরুরি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’