রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মরত লোকজন প্রায় প্রতিদিনই নানান দাবি নিয়ে নামছেন রাস্তায়। তা ছাড়া খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নাজেহাল রাজধানীবাসী। ভোগান্তিতে চরম মাত্রা যোগ করেছে অবাধে চলাচল করা অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। আইনকানুনের তোয়াক্কা না করা এসব রিকশায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। মানুষের দুর্ভোগের সীমা পৌঁছেছে চরমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে কদিন ধরেই বিক্ষোভ করছে ছাত্রদল। গতকাল সকাল থেকে শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে তারা। ওই এলাকায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয় যায়। গণপরিবহন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিকাল ৫টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করেন। সায়েন্স ল্যাব, পান্থপথ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণির দিকে শত শত যানবাহন সড়কে আটকে থাকতে হয়েছে। শাহবাগ থেকে পল্টনের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়া সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আন্দোলন আর সড়ক অবরোধে অফিসে পৌঁছানো যায় না। এভাবে চলতে পারে না। গত কিছুদিন ধরে ব্যস্ত নগরী ঢাকার চিত্র এমনই। রমনা, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, কারওয়ান বাজার, মতিঝিল, কাকরাইল, ফকিরেরপুল, প্রেস ক্লাব, আগারগাঁও, মগবাজার, হাতিরঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে, ১৫-২০ মিনিটে পার হওয়ার মতো রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথের দাবিতে মৎস্য ভবন মোড় বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা অবরোধ করে রেখেছিলেন তার অনুসারীরা। হাই কোর্টের রায়ের পর সরে দাঁড়ান বিক্ষোভকারীরা। তবে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে বিকাল পর্যন্ত মৎস্য ভবন মোড় থেকে যমুনা অবরোধ করেন তারা। মগবাজারের বাসিন্দা রিয়া জান্নাত বলেন, তিনি জরুরি প্রয়োজনে বসিলার উদ্দেশে সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন। বৃষ্টির মধ্যে দুই ঘণ্টায় ধানমন্ডি পর্যন্ত পৌঁছান। একপর্যায়ে বাসায় ফিরে যেতে বাধ্য হন। এদিকে মহাসড়কে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত চালনায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। নিয়ম ভেঙে অনেকে ‘পা তুলে’ কিংবা এক হাত স্টিয়ারিংয়ে রেখে, এমনকি মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে যান চালাচ্ছেন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গণপরিবহন ইকবাল বাসের চালক মিঠুন শেখ বলেন, ব্যাটারি রিকশা চলাচলের কোনো নিয়ম নেই। প্রতিদিন গড়ে ২০০টি নতুন রিকশা নামছে ঢাকা শহরে। তাদের কারণে সড়কে যান চলাচলে বেকায়দায় পড়তে হয়।
বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা জনদুর্ভোগ : ঢাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে অনেক অলিগলি। গতকাল সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢাকা ছিল ঢাকার আকাশ। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা বাজার কিছুক্ষণ পরই নামে ঝুম বৃষ্টি। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার, ওয়ারলেস মোড়, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, কাকরাইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভোগান্তির চিত্র। ওয়ারলেস রেলগেট এলাকায় হাঁটুপানি ডিঙিয়ে অফিস-আদালত ও গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে অনেককে।