আমদানির পর খালাস না নেওয়া গাড়ির বড় নিলাম ডাকতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩১টি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজারসহ ১০০ গাড়ি নিলামে বিক্রি হবে। শুল্কসহ এসব গাড়ির মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ২১ জানুয়ারি নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পর্যটকদের জন্য বিশেষ সুবিধায় আমদানি করা ১১২টি গাড়ি ২০২১ সালের শেষের দিকে একসঙ্গে নিলামে তোলা হয়েছিল। প্রায় তিন বছর পর হতে যাচ্ছে আরেকটি বড় আকারের নিলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, শুল্ক জটিলতাসহ নানা কারণে অনেকে বন্দর থেকে আমদানি করা গাড়ি ছাড় করাতে পারেন না। আমদানি পণ্য জাহাজ থেকে বন্দরে নামানোর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চালানের সব নথি কাস্টমসে হস্তান্তর করেন। আমদানিকারককে পণ্য খালাসের জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে চিঠি দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে আমদানিকারক সাড়া না দিলে নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। মামলা না থাকলে পণ্য নিলামে তোলা হয়। আর মামলা থাকলে অপেক্ষা করতে হয় আইনি জটিলতা নিরসন পর্যন্ত। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, গত আগস্ট পর্যন্ত নিলামযোগ্য গাড়ি ছিল ৩৭২টি। এর মধ্যে কড়াকড়ি আরোপের কারণে কিছু গাড়ি ডেলিভারি নেওয়া হয়েছে। বাকি গাড়ির মধ্যে ১০০টি নিলামে তোলার প্রস্তুতি শেষ করেছেন কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার (নিলাম) মো. সাকিব হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিলামযোগ্য ১০০ গাড়ির ইনভেনট্রি শেষে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন পেলে নিলাম ডাকা হবে। ২১ জানুয়ারি বা তার আগেও নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে।’ কাস্টম হাউসসূত্র জানান, বিক্রির তালিকায় থাকা গাড়ির মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩১টি ল্যান্ডক্রুজার রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সংসদ ভেঙে যাওয়ায় শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করতে পারেননি সংসদ সদস্যরা। ডেলিভারি না হওয়া এসব গাড়ি আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিলামে তোলা হচ্ছে। আমদানি মূল্যের সঙ্গে শুল্ক ও অন্যান্য চার্জ যোগ করে প্রতিটি ল্যান্ডক্রুজারের রিজার্ভ বা ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এ হিসেবে ৩১টির মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। অন্য গাড়ির মধ্যে রয়েছে পাঁচটি হ্যারিয়ার, ১৩টি হাবাল, তিনটি করে স্কয়ার, প্রিমিউ ও নোয়া। এ ছাড়া আছে এলিয়েন প্রাইভেট কার, ট্রাক, ডাম্প ট্রাক ও মিকচার ট্রাক। এগুলোর মূল্য আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার গাড়ি আসন্ন নিলামে তোলা হচ্ছে। প্রচলিত নিয়মের পাশাপাশি এবার নিলাম হবে ই-অকশন পদ্ধতি বা অনলাইনে। তাই দেশের যে কোনো এলাকা থেকে যে-কেউ নিলামে অংশ নিতে পারবেন। এর আগেও ই-অকশনে গাড়ির নিলাম হয়েছিল। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে খালাস না নেওয়া বিপুলসংখ্যক গাড়ি পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। মূলত এর পরই নিলাম কার্যক্রম গতি পায়।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ