মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

নাচের মান নেই চলচ্চিত্রে

আশির দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রের নাচ ছিল সত্যিকারের শিল্প। প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পীরা যুক্ত ছিলেন এই শিল্পের সঙ্গে। চলচ্চিত্র নির্মাতারাও নৃত্যকে শিল্পের মর্যাদা দিতেন। নাচের অবস্থা এখন অন্তঃসারশূন্য। বর্তমানে চলচ্চিত্রের নাচ মানে হাত-পা ছোড়াছুড়ি আর শরীর দোলানো মাত্র। যদিও বেশ কিছু ডান্স গ্রুপ যুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্রে। তবুও অবস্থার উন্নতি নেই। এই অবস্থা থেকে কীভাবে পরিত্রাণ সম্ভব। এ ব্যাপারে কয়েকজন নৃত্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

নাচের মান নেই চলচ্চিত্রে

ইমদাদুল হক খোকন

চলচ্চিত্রের নৃত্যের মান কমেছে সত্যি। এর জন্য নৃত্য পরিচালক বা শিল্পীরা দায়ী নন। আগে গানের কথা আর সুরের কারণে নৃত্যের কম্পোজিশন করা খুবই সহযোগী ছিল। আর এখন গানের কথা ও সুরের মন্দের কারণে কম্পোজিশন করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। গানের কথা ও সুরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মান থাকে না। তাছাড়া এখনকার নির্মাতারা নাচের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সময় দিতে নারাজ। ফলে তারাহুড়ো করে দায়সারা গোছের কাজ করতে গিয়ে চলচ্চিত্রের নৃত্যের মান বলে কিছুই থাকছে না। এখনকার নির্মাতাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই নাচ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। নাচ হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিনোদন। ছবি হয়তো দর্শক একবার দেখে। কিন্তু টিভিতে গান বার বার প্রচার হয়। মানে ছবির চেয়ে নাচ বেশি প্রদর্শন হয়। তাই নাচের প্রতি যত্নবান হওয়া জরুরি। এক কথায় নাচের ব্যাপারে নির্মাতাদের সচেতন ও মনোযোগী হতে হবে। নৃত্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতে হবে।

 

মুনমুন আহমেদ

চলচ্চিত্রে যারা নাচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের বেশিরভাগেরই নাচ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ নেই। ফলে চলচ্চিত্রের নাচ প্রতিনিয়ত প্রশ্নের মুখে পড়ছে। যে কোনো কাজ যথার্থভাবে পেতে গেলে অভিজ্ঞদের দিয়ে কাজ করানো প্রয়োজন। না হলে মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। চলচ্চিত্রের নাচের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বাজেটেরও অভাব আছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে কোনোভাবে অবহেলা করার সুযোগ নেই। অথচ চলচ্চিত্রের নাচের ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। চলচ্চিত্রের নির্মাতাদেরও নাচ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ, অনুশীলন, চর্চা এবং স্কুলিংয়ের বিকল্প নেই। চলচ্চিত্রের নাচকে যথাযথ করতে হলে এসব বিষয়ে নির্মাতাদের সচেতন হতে হবে।

 

শিবলী মহম্মদ

নৃত্যের বিষয়টিকে চলচ্চিত্রকাররা কতটা গুরুত্ব দেন সে ব্যাপারে আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তারা যদি বিষয়টিকে সত্যিই ফিল করতেন তাহলে সৃজনশীল নাচের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নিয়ে কাজ করতেন। এখন তো সময় উপযোগী নাচই হচ্ছে না। ফলে এই নাচ আর গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। শিল্পীদের মধ্যেও বেশিরভাগেরই নাচ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। ফলে চলচ্চিত্রের নাচ কোনোভাবেই প্রাণ পাচ্ছে না। বলিউড অভিনেত্রী রেখা ‘ওমরাহ জান’ ছবির জন্য ৬ মাস নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ‘দেবদাসে’র জন্য মাধুরী এক বছরেরও বেশি সময় নাচ শিখেছেন। ভারতের ঐতিহাসিক ছবিগুলোতে নৃত্যগুরুদের দিয়ে কাজ করানো হয়। এখানে তা নেই। তাই সৃজনশীলতার অভাব সব সময়ই চোখে পড়ে। এখন চলচ্চিত্রের নাচ হচ্ছে করার জন্য করা। সত্যিকার অর্থে কোনো শিল্প মনে করা হয় না নাচকে। চলচ্চিত্রের নাচকে শিল্পমানে উন্নীত করার চেষ্টাও কারও মধ্যে দেখি না। যা সত্যিই দুঃখজনক।

 

শামীম আরা নীপা

চলচ্চিত্রের নাচ এখন আর আগের মতো নেই। কারণ, এখন আর কেউ জেনে-বুঝে নৃত্য পরিচালনা করছে না। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে, নাচের মৌলিকত্ব বলতে কিছুই নেই এখন। কপি-পেস্ট চলছে শুধু। মানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতীয় চলচ্চিত্রের নাচকে নকল করা হচ্ছে। যোগ্যতার অভাবে কপি করতে গিয়ে তাও হচ্ছে না। একসময় গওহর জামিল, জি এম মান্নানদের মতো নৃত্যগুরুরা চলচ্চিত্রের নাচের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে সত্যিকারের নাচ পাওয়া যেত। এখন তো প্রপার ডান্সারদের চলচ্চিত্রে ডাকা হয় না।

ফলে চলচ্চিত্রের নাচের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। যারা আছেন তারা কপি করা নাচের মাধ্যমে কেবল গ্লামার দেখাতে চান, মৌলিকত্ব নয়। বিষয়টি দুঃখজনক। চলচ্চিত্রের নাচকে উন্নত করতে প্রশিক্ষণ, চর্চা, সময় দেওয়া, সত্যিকারের নৃত্যশিল্পীদের দিয়ে নাচ করানোসহ এক্ষেত্রে অভিনয় শিল্পীদেরও নাচ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর