শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : মৌসুমী

সৌন্দর্য রহস্য বলে আমার কাছে কিছু নেই

সৌন্দর্য রহস্য বলে আমার কাছে কিছু নেই

মৌসুমী, প্রিয়দর্শিনী খ্যাত এই অভিনেত্রীর জন্মদিন এলেই তাঁর দর্শক ভক্তরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেন না। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে এখনো সাধারণ মানুষের মনের মণিকোঠায় ঠাঁই করে আছেন তিনি।  কেমন কাটালেন জন্মদিন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

জন্মদিন, মানে খুশির দিনটা কেমন কাটল?

খুবই ভালো কেটেছে। তবে এই বয়সে এসে জন্মদিন পালন করব এটি ভাবতে কেমন জানি লজ্জা লাগে। তার পরেও স্বামী-সন্তান ও ভক্তদের আয়োজন উপেক্ষা করতে পারি না। জন্মদিনের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে সানি বাসায় কেক কাটার আয়োজন করেছে। এরপর ওর ফেসবুক পেজে সেই ছবি পোস্ট করল। সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের উইশের ফুলঝুরিতে ভেসে গেলাম। সবাইকে ধন্যবাদ জানচ্ছি। তাছাড়া গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে জন্মদিনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছাড়াও কিছু ফটোশুট এবং কিছু কাজের অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। সবার ভালোবাসা ও দোয়া পেলাম। বলতে পারেন আনন্দঘনভাবে আমার বিশেষ এই দিনটি কেটে গেল।

 

চলচ্চিত্রে আসার আগে পরের জন্মদিনের মধ্যে পার্থক্য কেমন মনে হয়?

আগে পারিবারিকভাবে দিনটি পালন করা হতো আর এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দর্শক-ভক্ত ও চলচ্চিত্রের প্রিয় মানুষ। পার্থক্যটা শুধু এখানেই। তবে এখনো জন্মদিন এলেই আব্বুর কথা খুব মনে পড়ে। আমার সবকিছুই আব্বুর নখদর্পণে ছিল। তাই জীবনের এ পর্যায়ে এসে আব্বুকে খুব বেশি মিস করি। আবার এই জন্মদিনে আম্মুও পাশে নেই। সবকিছু মিলিয়ে যদিও নিজের ভিতর কষ্ট বা খারাপ লাগা আছে, কিন্তু আমার দুই সন্তান ফারদিন ও ফাইজাহর মুখ দেখে সেই কষ্ট ভুলে থাকি। ওরাই আমার সুখের পৃথিবী। ওরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকব, শান্তিতে থাকব। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। যে যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

 

আপনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত, তাছাড়াও নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, নিয়ে কিছু বলুন-

প্রথমেই বলতে চাই, আমাদের সবাইকে অবশ্যই শিশু ও নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যদি আমরা এটা করতে পারি, তবেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। অভিনয়ের পাশাপাশি নারী ও শিশুর জীবনমান উন্নয়নে মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৩ সালে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাম্বাসাডরস নিযুক্ত হই। এরপর থেকে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুর পুষ্টি, জন্ম নিবন্ধন, শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শিশুর টিকাদান বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন আপৎকালীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আসলে অভিনয় দিয়ে মানুষকে বিনোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আজীবন কাজ করে যেতে চাই।

 

আপনাকে প্রিয়দর্শিনী বলা হয়, নিজের সৌন্দর্যের রহস্য কী?

প্রত্যেকটা বয়সেরই আলাদা সৌন্দর্য আছে, কিশোরী থেকে চল্লিশোর্ধ-সব বয়সের সৌন্দর্যই আমার কাছে দারুণ উপভোগ্য। তাই নিজের সৌন্দর্যের রহস্য বলে আমার কাছে কিছু নেই। কাজ নিয়ে ব্যস্ততা আর টেনশন ফ্রি থাকতে পারলেই সৌন্দর্য অটুট থাকে।

 

নিজেকে অসাধারণ ভেবেছেন কখনো?

না, নিজেকে এমনটা কখনো ভাবিনি। সাধারণ একটা মেয়ে ছিলাম। একটা ছবিতে কাজ করব। সবাই দেখবে, ভালো বলবে। নিজের আলাদা একটা পরিচয় হবে-এটুকু পর্যন্ত স্বপ্ন দেখতে পেরেছি। কিন্তু তারপর যেসব ঘটে গেছে সেগুলো স্বপ্নের বাইরে ছিল। অভিনয় শুরুর আগে আদর্শ মানতাম শাবানা ও ববিতা ম্যাডামকে। পরবর্তীতে নায়িকা শাবনাজের অভিনয় দেখে অনুপ্রাণিত হই। শাবনাজের ‘চাঁদনী’ ও ‘দিল’ ছবিটি সিনেমা হলে গিয়ে দেখার পর মনে হলো, শাবনাজ পারলে আমি কেন পারব না? দিনে দিনে নিজেকে   প্রস্তুত করেছি। এই মনোবলের কারণেই আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।

 

দুই দশকেরও বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি কেমন?

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, দর্শকদের ভালোবাসা। শিল্পী জীবনে এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এর কোনো হিসাব মেলাতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি কি আসলেই এত বেশি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য? যে মানুষটিকে আমি চিনি না, জানি না, সে মানুষটি কি আমার অজান্তে আমাকে এত ভালোবাসতে পারে? ভাবতেই অবাক লাগে। আবার ভাবি, এরকম ভালোবাসা একজন শিল্পীর প্রতি আছে। হতে পারে। এরকম হয় বোধ হয়।

 

একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে কতটা পূর্ণ মনে করেন?

সত্যিকারের একজন শিল্পী অভিনয়ের পথচলায় নিজেকে কখনো পরিপূর্ণ মনে করেন না। শিল্পীমনে নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করার আকাক্সক্ষা থেকেই যায়। আমারও সেই অতৃপ্তি আছে, চ্যালেঞ্জিং আরও নতুন চরিত্রে কাজ করার ক্ষুধা আছে। হ্যাঁ, এটা সত্যি, একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করে সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষুধা নিবারণ হয়, কিন্তু পরে আবার সেই ক্ষুধা সৃষ্টি হয়। শিল্পীমন এমনই। তবে আমার কর্মজীবনের পূর্ণতা পাবে তখনই যখন দেশের জন্য,  দেশের মানুষের জন্য, সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারব।

 

আগামীতে দর্শক আপনার কোন চলচ্চিত্রটি দেখতে পাবে?

দীর্ঘদিন পর একই দিনে আমার দুটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের।  সরকারি অনুদানে নির্মিত দুটি সিনেমার গল্পই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আশা করছি দুটি সিনেমাই দর্শকরা খুব উপভোগ করবেন। আশুতোষ সুজন পরিচালিত সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘দেশান্তর’ সিনেমার গল্প এবং এতে আমার অভিনীত চরিত্রটি ভীষণ ভালো  লেগেছে। অন্যদিকে মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেন পরিচালিত ‘ভাঙ্গন’ সিনেমাটির গল্প ও এতে আমার রূপায়িত চরিত্রটিও অসাধারণ ছিল। তাছাড়া বেশকটি সিনেমায় কাজ করেছি।  এর মধ্যে শিগগিরই মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে জাহিদ হোসেন পরিচালিত ‘সোনার চর’।

 

সর্বশেষ খবর