‘ভালো হোক মন্দ হোক বাবা আমার বাবা, পৃথিবীতে বাবার মতো আর আছে কেবা...’ আশির দশকে এ জে মিন্টু পরিচালিত ‘সত্য মিথ্যা’ সিনেমার এ গানটির মতো সব সন্তানই এভাবে গেয়ে ওঠে। সত্যি তাই, বাবা নিখাদ আশ্রয়। প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস পালন করা হয়। সে হিসেবে আজ বিশ্ব বাবা দিবস। এ দিনে বাবাদের নিয়ে বলেছেন শোবিজ অঙ্গনের বেশ কজন তারকা। তাদের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
বাপ্পারাজ
নায়করাজ রাজ্জাক এদেশের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে একটি জনপ্রিয় নাম। কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসার প্রিয় নাম রাজ্জাক। সবচেয়ে বড় কথা সংসার জীবনেও তিনি সফল ছিলেন। সর্বোপরি একজন সফল বাবা ছিলেন তিনি। সংসার জীবনে সুখী মানুষের তালিকায় (শোবিজ তারকাদের মধ্যে) তাঁর নামটি উঠে আসত অনায়াসে। তাই তো তিনি সন্তানদের ও স্ত্রীকে নিয়ে গড়তে পেরেছিলেন লক্ষ্মীকুঞ্জ।
সম্রাট
নায়করাজ রাজ্জাক আমার বাবা- এ প্রাপ্তি আমাকে গর্বিত করে। নায়করাজের ছোট ছেলে আমি ভাবতে ভালো লাগে। কষ্ট লাগে তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু তাঁর আদর্শ জড়িয়ে আছে আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে আর প্রাত্যহিক কাজকর্মে। বাবা জীবনে যে সংগ্রাম করেছেন, কষ্ট করেছেন, পরিশ্রম করেছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি আমাদের পুরো পরিবারকে যত্ন এবং ভালোবাসার সঙ্গে একই সুতায় বেঁধে রেখেছিলেন, তা আমাদের কাছে বড় একটা শিক্ষণীয় বিষয়।
হাবিব ওয়াহিদ
বাবা সব সময় আমার জীবনের আইডল; তাকে যত দেখি ততই যেন মুগ্ধ হই। আমার ইচ্ছার দাম দিয়েছেন বাবা সব সময়। যেখানে কঠোর হওয়া দরকার, সেখানে কঠোর হয়েছেন, শাসন আর আদর করেছেন সমানভাবে। পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো।
মাশরুর পারভেজ
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ড্যাশিং হিরো খ্যাত সোহেল রানার পুত্র মাশরুর পারভেজ বাবার অনুপ্রেরণায় অভিনয় এবং নির্মাণে আসেন। উভয়ে প্রথম অভিনয় করেন ‘অদৃশ্য শত্রু’ ছবিতে। এরপর সোহেল রানা প্রথম কোনো টিভি নাটকে অভিনয় করলেন। পুত্রের পরিচালনায় ‘রানা’র নাটকে পিতা-পুত্র একসঙ্গে অভিনয় করেন।
কাজী মারুফ
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা কাজী হায়াৎ খ্যাতিমান অভিনেতাও। তিনি আশির দশকে তাঁর পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি ‘খোকন সোনা’তে শিশুপুত্র কাজী মারুফকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করান। এরপর নায়ক হিসেবে কাজী মারুফ বাবার সঙ্গে অসংখ্য ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। কাজী মারুফ বলেন, আমি একজন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকারের পুত্র, এ পরিচয়টিই আমার চলার পথের পাথেয়।
আঁখি আলমগীর
আমার বাবা একজন পরিপূর্ণ মানুষ। বিপদে-আপদে আমাদের কাছে সাহসিকতার আরেক নাম বাবা। আমি বড় আর স্বাবলম্বী হয়েছি ঠিকই, তারপরও বাবার কাছে জবাবদিহির জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে। মেয়ে হিসেবে সত্যিই ভীষণ গর্বিত। আবার যদি সিনেমায় অভিনয় করি তবে অবশ্যই আব্বুর সঙ্গে একই ফ্রেমে অভিনয় করব, নতুবা নয়।
দিঠি আনোয়ার
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমার আব্বু গাজী মাজহারুল আনোয়ার দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত একজন মানুষ। আব্বুর এ বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। যে কারণে আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। আমার আব্বু গাজী মাজহারুল আনোয়ার এটাই আমার অনেক অনেক গর্বের বিষয়। তাঁর সন্তান হিসেবে অনেক স্থানেই সম্মানিত হই।
ঐন্দ্রিলা
‘মহানায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে হতে পারাটা অন্য যে কোনো পরিচয়ের চেয়ে আমার কাছে অনেক বেশি তৃপ্তির ও গর্বের।’ বাবার কথা বলতে গেলেই ক্ষোভে-বেদনায় মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ বাবার মতো একজন গুণী মানুষের এখন পর্যন্ত এ দেশে কোনো মূল্যায়ন হলো না। আসলে এসব নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। চারদিকে গুণীর কদর কমছে। গুণীদের প্রতি এমন নীরবতা হতাশার।
বিপাশা হায়াত
প্রতিটি সুন্দরের স্পর্শ তাঁকে নতুন জীবন দিয়ে চলে। প্রতিটি স্বপ্ন তাঁকে প্রাণস্পর্শ দেয়। কর্মের ভিতর দিয়ে তিনি সেই সুন্দর আর স্বপ্ন ছড়িয়ে দেন চারপাশে। সন্তানের দূরত্ব তাঁকে বেদনার্ত করে; কিন্তু দেশমাতৃকার দূরত্ব তাঁকে নির্জীব করে। জন্মস্থান নয়, বাংলাদেশকে তিনি দিয়েছেন তাঁর নিঃশেষ অধিকার, বাবা দিবসে বাবা আবুল হায়াতকে নিয়ে কথাগুলো বলেছেন অভিনয়শিল্পী বিপাশা হায়াত।