বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার :- অপি করিম

ফরীদি ভাইয়ের মধ্যে অদ্ভুত ক্যারিশমা ছিল

ফরীদি ভাইয়ের মধ্যে অদ্ভুত ক্যারিশমা ছিল

অপি করিম। যাঁর মুক্তোঝরা হাসি সবার হৃদয়ে দোলা দেয়। মঞ্চ, টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন কিংবা চলচ্চিত্র; এমনকি উপস্থাপনা-নৃত্য, সব ক্ষেত্রেই এই নন্দিনীর দ্যুতি ছড়ানো প্রতিভা। ১৮ বছর পর আবার বড় পর্দায় ফিরছেন তিনি ‘মায়ার জঞ্জাল’র মাধ্যমে।  এই সিনেমা ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

মায়ার জঞ্জালে অভিনয় করতে রাজি হওয়ার কারণ কী ছিল?

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করার ভীষণ ইচ্ছা ছিল। এরপর তো তাঁর কথা শুনে পরে গল্পটা পড়লাম। সেটাও আমাকে খুব টেনে নিল। দ্বিতীয়ত, আমার চরিত্রটা। সোমা যে খুব বড় ক্যারেক্টার তা নয়। কিন্তু এর মধ্যে একটা অদ্ভুত মায়া আছে। আর হৃত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করার লোভ ছিলই। তিনি আমার খুবই পছন্দের একজন অভিনেতা। এই সিনেমা করার পেছনে বাংলাদেশি প্রযোজক জসীম আহমেদ ও অম্লানদার ভূমিকাও প্রাণিত করেছিল। সব মিলিয়েই কাজটি করা। আমি এমন কিছুর অপেক্ষায়ই ছিলাম।

 

সিনেমাটি কবে বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে?

শুটিং হয়েছে ঢাকা ও কলকাতায়। এটি একসঙ্গে দুই দেশে মুক্তি পাবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। তার আগে ২০ তারিখে ঢাকায় আসবেন হৃত্বিক চক্রবর্তী। ঢাকা প্রিমিয়ারে অংশ নেবে সবাই।

 

এত দীর্ঘ সময় পর অভিনয়ে। কারণ কী ছিল?

অভিনয় করতে ভালোবাসি কিন্তু কখনই পড়াশোনাকে ছাপিয়ে আমি অভিনয়কে প্রাধান্য দিতে চাইনি। সবসময় পড়ালেখাটা আগে ছিল, এরপর অভিনয়। এখন সবার আগে আমার ব্যক্তিগত জীবন।

 

দীর্ঘদিন পর্দায় না থাকায় ভক্তরা ভাবছেন আপনি অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। বিষয়টা একটু খোলাসা করবেন কি?

আসলে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম এতদিন। এখন আমার কন্যাসন্তান রশ্মি আছে। তাকে নিয়েই এখন সব ব্যস্ততা। কভিটের সময় রশ্মির জন্ম। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত তার বেড়ে উঠাসহ সব বিষয়ে দেখাশোনা আমাকেই করতে হচ্ছে। কারও কাছে রশ্মিকে রেখে চলে যাব, আমার জন্য তা সম্ভব হয় না। তবে সেই সাপোর্টটা যদি পাই আবারও সেই রেগুলার লাইফে চলে যাব। মানে আমার চাকরি ও অভিনয়টা নিয়মিতই করার চেষ্টা করব। এখন কাজ করতে চাই। অভিনয়টা করতে চাই এখন। ভালো কাজ করতে চাই। সেটা টিভি, সিনেমা বা ওটিটিতেই হোক না কেন।

 

টিভি, চলচ্চিত্র নাকি মঞ্চ-কোনটিতে অভিনয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?

মঞ্চ, এটি অন্যরকম বিষয়। মঞ্চে একটা লার্নিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। রিহার্সেল করতে হয়। প্রতিটি রিহার্সেলে আপনি কিছু না কিছু শেখেন। বই পড়তে হয়। এই প্রসেসটা আমার ভীষণ পছন্দ। অভিনয় করার সময় সরাসরি দর্শকের সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সেখানে আমি ভালো করতে পারি, আবার খারাপও। এই এক্সপেরিয়েন্সটা সুন্দর।

 

হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে বেশ কিছু কাজ করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। কিছুটা ভক্তদের জন্য শেয়ার করবেন কি?

ফরীদি ভাই এমন একজন মানুষ ছিলেন যাঁর সঙ্গে শুধু স্ক্রিন শেয়ার নয়, তাঁর সঙ্গে যদি আপনি মেকাপরুমে বসেও থাকতেন তখন অনেক কিছুই জানা যেত। শেখা যেত। আমাদের তো স্কুল নেই। বড়দের দেখতে দেখতে শিখেছি। হুমায়ুন ফরীদির মধ্যে অদ্ভুত একটা ক্যারিশমা ছিল। স্ক্রিনে তিনি কি যেন একটা করেন, সারাক্ষণ তাঁর দিকে নজর থাকে সবার। তিনি কঠিন শব্দগুলোও খুবই সহজ করে বলতেন। এটা আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। শিখেছি বলব না, আমি এসব ফলো করতাম। একবার আমি একটি কাজ করছিলাম, যার কারণে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা। ফরীদি ভাইকে এমনি এমনি জিজ্ঞাসা করছিলাম, ভাই আপনার জন্য কি আনব? তিনি বললেন, আনবে, সত্যি আনবে? আমি বললাম, হ্যাঁ আনব। তিনি একটা শ্যাম্পু ব্যবহার করতেন তা আনতে বললেন। এরপর আমি বিদেশ থেকে এসে তাঁকে ফোন করে দেখা করতে চাইলাম। তিনি যেতে বললেন। আমি তাঁর বাসায় গেলাম। শ্যাম্পুটা তাঁর সামনে ধরে বললাম, নিন। তিনি শ্যাম্পুটা ধরে নাড়াচাড়া করে বললেন, তুমি এটা মনে রেখেছ! এটা তো আমারই মনে ছিল না। তো শিশুর মতো হাসছিলেন। পরে আমি বললাম, আমি যতবার বাইরে যাব ততবারই আপনার জন্য নিয়ে আসব। এরপর তিনি যতদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন আমি তাঁকে ফোন দিতাম। বলতাম, নিয়ে আসব কি? তিনি বলতেন, না না আছে। এই লটে দরকার নেই, পরে। এরপর আরেকবার বোধহয় এনেছিলাম। এরপর তো মানুষটাই চলে গেলেন। আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। তাঁকে আসলে খুবই মিস করি।

 

যুবরাজ খালেদ খান, যাঁর সঙ্গে মঞ্চ ও টিভিতে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। তিনি আজ নেই। তাঁর শূন্যতা কতখানি ভাবায়?

যুবদার শূন্যতা আসলে আমাদের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রত্যেক সদস্যের জন্য অপূরণীয় এক শূন্যতা। শুধু আমার জন্য নয়। আমারটা শূন্যতারও বাইরে যদি কিছু থাকে। বিশেষ করে এই শূন্যতাটা শুরু হয়েছিল যুবদা যখন অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর যখন তিনি বললেন যে, রক্তকরবী তিনি নিয়মিত করতে পারবেন না তখন থেকে। আমাদের সঙ্গে রাজীব নামে একজন কাজ করতেন। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু যুবদার সেই গান, সেই সংলাপ বলা, দাঁড়ানো, নন্দিনীর দিকে তাকানো-খুবই মিস করি এখন। এটা আমি বলেছি অনেক জায়গায়, তারপর বলি-একটা জায়গায় এমন ছিল যে, আমি বসে যুবদার গান শুনতে থাকব। গানটি ছিল, ‘ওগো দুখ জাগানিয়া তোমায় গান শোনাব’। তো এমন একটা শো নেই যে, তাঁর কণ্ঠে ‘দুখ জাগানিয়া’ শব্দ শুনতেই আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ত। তো তাঁকে খুবই মিস করি। আর যুবদাকে আমি যখন তখন ফোন দিতাম। সবচেয়ে মিস করি এটি। কবিতা আবৃত্তি, উচ্চারণ বিষয় নিয়ে যখন তখন তাঁকে জ্বালাতাম।

 

মায়ার জঞ্জালের পর নতুন কোনো প্রজেক্ট প্ল্যান ছিল?

কিছু কথা হচ্ছিল দুই দেশেই। তারপর তো কভিট। কভিটের পর বন্যা। সবকিছু মিলিয়ে কিছুই এগোয়নি। কভিটের মধ্যেও অনেকে বলেছেন, তখন করতে পারিনি।

 

এনামুল করিম নির্ঝর বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করছেন। সেখানকার কোনো প্রজেক্টে কাজ করছেন কি?

একটি সিনেমায় কাজ করেছি। এটি কভিটের মধ্যেই হয়েছে। তখন আমরা বাড়িতেই গৃহবন্দি। তখনই এটার শুট করা। তো নির্ঝর সবকিছুই ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ডিরেকশন দিয়েছেন, ক্যামেরা চালিয়েছেন। ঘরে আরও দুজন সহযোগী ছিল। নির্ঝরের নির্মাণ ও গল্পগুলো অন্যরকম হয়।  যা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। তিনি বলেছিলেন অভিনয় করতে হবে না, যা কর তাই করতে বললেন। আমি জানি না আসলে কি করেছি, কি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর