পাইরেসি ও বিদেশি গানের প্রতি শ্রোতাদের আসক্তির কারণে অডিও ব্যবসা ধ্বংসের মুখে। নতুন শিল্পীদের অ্যালবাম প্রকাশ হলেও জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ব্যবসায় মন্দার কারণে প্রযোজনা সংস্থাগুলোও অর্থ বিনিয়োগ করে অ্যালবাম প্রকাশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আর তাই শীর্ষ শিল্পীরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে আর অ্যালবাম প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন না। তাই বাজারশূন্য হয়ে পড়েছে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, সৈয়দ আবদুল হাদী, আবদুল জব্বার, এন্ড্রু কিশোর, তপন চৌধুরী, এসডি রুবেল, কুমার বিশ্বজিৎ, আইয়ুব বাচ্চু, জেমসসহ অনেকের নতুন অ্যালবাম। বর্তমানে তাদের ব্যস্ততার অনেকটা সময় জুড়ে আছে কনসার্ট, টিভি, স্টেজ শোকে কেন্দ্র করে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে তারকা শিল্পীদের নতুন গান থেকে শ্রোতারা বঞ্চিত থাকছেন। এন্ড্রু কিশোর বলেন, 'এখন আর নতুন অ্যালবাম করার ইচ্ছা নেই। অডিও বাজারের এ দুর্দিনে নতুন অ্যালবাম করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না। তা ছাড়া নবীনদেরও সুযোগ দিতে হবে। তারাও তাদের প্রতিভা দিয়ে বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করুক।' তিনি আরও বলেন, আমার অনেক গান সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই গানগুলো সংরক্ষণ করা খুব প্রয়োজন বলে মনে করছি।' এসডি রুবেল বলেন, পাইরেসি, নেটে ডাউনলোড,মোবাইলে প্রচারসহ নানা কারণে ক্রেতারা এখন আর গানের অ্যালবাম কিনতে চায় না। তাই অডিও প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে অ্যালবাম প্রকাশ ও লোকসানের কবলে কোনো শিল্পী পড়তে চাইবে না। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, 'নতুন অ্যালবাম করতে চাই। কিন্তু বর্তমান সময়ে অডিও প্রতিষ্ঠানগুলোর যে অবস্থা নতুন অ্যালবাম করতে সাহস পাই না। কিন্তু আমার পুরনো গানগুলো নিয়ে আরও একটি অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করছি। সর্বশেষ একটি মুঠোফোন কোম্পানি থেকে 'গোল্ডেন সং অব কুমার বিশ্বজিৎ' শীর্ষক অ্যালবাম প্রকাশ হয়। জেমস বলেন, 'অ্যালবাম কিনে এখন আর কেউ গান শুনে না। সকালে অ্যালবাম প্রকাশ হলে রাতেই তা অনলাইনে পাওয়া যায়। এই সময়ে এসে নিজের টাকা খরচ করে অ্যালবাম প্রকাশ করার কোনো ইচ্ছা নেই। স্টেজ শো আর চলচ্চিত্রে গান নিয়ে ভালো আছি। আইয়ুব বাচ্চু বলেন, 'অ্যালবাম করার ইচ্ছা তো আছে সবার মনে। কিন্তু কি হবে? সকালে অ্যালবাম প্রকাশ করলে রাতেই তা পাওয়া যাবে অনলাইনে। তাই আর কোনো নতুন অ্যালবাম করতে ইচ্ছা হয় না। শ্রোতাদের যদি গান শুনাতে ইচ্ছা করে আমি নতুন একটি গান করে নিজ থেকে অনলাইনে দিয়ে দেব।'
দিলরুবা খান বলেন, 'শিল্পী জীবনের এ জায়গায় এসে নিজের টাকা দিয়ে অ্যালবাম করতে ইচ্ছা হয় না। এখন আমরা অবহেলিত সব মাধ্যমে। টিভি শোগুলোতে এখন আর আমাদের ডাকে না। অ্যালবাম কোম্পানিগুলো আমাদের দিয়ে অ্যালবাম করাতে চায় না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা কি বাতিল হয়ে গেছি।
সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, 'আমাদের জীবনে যা গাওয়ার আমরা গেয়ে দিয়েছি। যদি কেউ ডাকে গান করতে তবে গেয়ে দেব। কিন্তু এই সময়ে এসে আর নতুন একক অ্যালবাম করার কোনো ইচ্ছা নেই।
গত ঈদে সব মিলিয়ে ২৫০টির অধিক নতুন সিডি বাজারে এসেছে। তার মেধ্য বেশ কিছু শীর্ষ শিল্পীর অ্যালবামও ছিল।