চলে গেলে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরী (দেবী)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার ভোরে কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।
১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন বার্মায় জন্মগ্রহণ করেন সুপ্রিয়া দেবী। সুপ্রিয়া’র বাবা গোপাল চন্দ্র ব্যানার্জি পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সপরিবারে কলকাতায় চলে আসে তার পরিবার। মাত্র ৭ বছর বয়সে বাবার পরিচালিত একটি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন সুপ্রিয়া। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৫২ সালে নির্মল দেব পরিচালিত বসু পরিবারে উত্তম কুমারের সাথে সিনেমার পর্দায় আসেন সুপ্রিয়া। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে একটার পর একটা দৃষ্টিনন্দিত ছবি উপহার দিয়েছেন দশর্কদের। সেটা কখনও নিজের অভিনয় দক্ষতায়, কখনও উত্তম কুমারের সাথে জুটি বেধে। এর পাশপাশি অনিল চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো দাপুটে অভিনেতাদের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন সুপ্রিয়া দেবী।
তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বসু পরিবার’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’, সব্যসাচী’, ‘মন নিয়ে’, ‘সোনার হরিণ’, ‘দেবদাস’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, বন পলাশের পদাবলী, প্রতিটি ছবিতেই নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। তবে শুধু অভিনয়েই নয়, নাচেও ছিল তার পারদর্শীতা। অসম্ভব পারদর্শিতা ছিল রান্না শিল্পেও।
১৯৫৪ সালে বিশ্বনাথ চৌধুরীর সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন সুপ্রিয়া দেবী। বেশ কয়েক বছর পর কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার, ২০১১ সালে বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও লাইফ-টাইম অ্যাচিভমেন্টসহ একাধিক পুরস্কার পান তিনি।
সুপ্রিয়া দেবীর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মৃত্যুর পরই তার বাড়িতে ছুটে যান পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী।
সুপ্রিয়া দেবীর দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহকর্মী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘এই খবর খুবই কষ্টের। বয়স হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের ৬০ বছরের বন্ধুত্ব। একসঙ্গে অনেক ছবি করেছি। এরকম অভিনেত্রী হঠাৎ করে পাওয়া যায় না’।
সহকর্মীর মৃত্যুতে আরেক প্রখ্যাত অভিনেত্রী সাবিত্রি চট্টোপাধ্যায় এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে প্রিয় বান্ধবীর মৃত্যুর খবরে কিছুটা অসুস্থও হয়ে পড়েন। তিনি জানান, আজ আমার শরীর খুবই খারাপ লাগছে, তার মৃত্যুর খবর টিভিতেও দেখতে পারছি না। ওর বাড়িতেও যাবো না, দেখবোও না’।
চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ জানান, ‘এত সকালে এ রকম একটা খারাপ খবর আমি ভাবতেই পারছি না। আমাদের পিয় বেণু দি চলে গেলেন-এটা বিরাট ক্ষতি। তিনি একটু অসুস্থ ছিলেন, তবু আমাদের মধ্যেই ছিলেন। তিনি আমাকে কতবার বলেছিলেন যে আমরা দুইজন একসঙ্গে কাজ করবো। কিন্তু সেটা আর করা হলো না এটা আমার কাছে বড় আক্ষেপ’।
জনপ্রিয় ও গুণী এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ বিশিষ্টজনেরা।
বিডি প্রতিদিন/২৬ জানুয়ারি ২০১৮/এনায়েত করিম