পৌষের শীতের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হলো বটতলা প্রযোজিত নাটক ‘খনা’। শুক্রবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত এই নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী হায়দার।
‘খনা’র কাহিনীতে দেখা যায়, এক বিদুষী ‘খনা’ যার অন্য নাম লীলাবতী। তার গল্পটা অনেক পুরনো, কিংবদন্তির ঘেরাটোপে বন্দী। তবু যেটুকুর তল খুঁজে পাওয়া যায় তাতে বোধ হয়, তিনি এক বিদুষী জ্যোতিষী, স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী। শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব দর্শনে বরাহের হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তার ‘খনা’ হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা।
খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূ-খন্ডের বৃষ্টি, পলি, আর জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণতি নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষোর সঙ্গে, সেই তার কাল। পুরুষতন্ত্র না শ্রেণি কাঠামো, নাকি উভয় দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপ্রতীপে। মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবন ত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার। খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তার সে নেশা কি এক রোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে সম্মুখীন প্রশ্ন করেন। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনি।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা, ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান, শেউতি শাগুফতা, মিজানুর রহমান, সুমিত তেওয়ারি রানা, ম. সাঈদ, পঙ্কজ মজুমদার, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, হুমায়ূন আজম রেওয়াজ, নাফিউল ইসলাম, হাফিজা আক্তার ঝুমা প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক